জহিরুল ইসলাম; বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক। পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেন দু’দফায়, পাসপোর্ট তৈরিও হয়। কিন্তু সেই পাসপোর্ট নাকি অফিস থেকেই গায়েব হয়ে গেছে! এ ঘটনায় হতাশ জহিরুল, তিনি এখন কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন? ভেবে পাচ্ছেন না এই প্রবাসী বাংলাদেশি।
অবাক করার মতো ঘটনাটি ঘটেছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে। পাসপোর্ট সমস্যার সমাধানে হাইকমিশনের কর্তাদের টেবিলে টেবিলে ধর্না দিয়েও কোনো সুরাহা পাননি ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম।
বারবার যাওয়ায় বিরক্ত হয়ে হাইকমিশনের খোদ ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট) মসিউর রহমান তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় চরম সংকটে রয়েছেন এই প্রবাসী বাংলাদেশি। পাসপোর্ট না থাকায় ওয়ার্ক পারমিটও নবায়ন করতে পারেননি তিনি। আর ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে না পারায় তার নাম উঠেছে অবৈধ প্রবাসীর খাতায়। এরই মধ্যে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে মালয়েশিয়া পুলিশ তাকে আটকও করেছে। একরাত থাকার পর ১২০০ রিঙ্গিত (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫ হাজার টাকা) ঘুষ দিয়ে ছাড়িয়ে নেন তার চাকরিদাতা।
কিন্তু এভাবে কয়দিন চলবেন? আবার বেশি দিন অবৈধ থেকে গেলে নতুন করে নবায়ন করতে জটিলতায় পড়তে হবে তাকে। এসব জটিলতার কথা পাসপোর্ট উইংয়ের সবারই জানা। কিন্তু এই প্রবাসীর পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। উল্টো তাকে শ্রমিকদের কল্যাণে নিয়োজিত সেই কর্মকর্তারাই হাইকমিশন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লা সদর থানার শাসনগাছা গ্রামে। তিনি জানিয়েছেন, গত ২৯ ডিসেম্বর প্রথম দফায় পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন জমা দেন (এনরোলমেন্ট নম্বর MYS100000533788) হাইকমিশনের আমপাং অফিসে। পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার জন্য তাকে সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া হয় চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝির দিকে অফিসে যান পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে। সেখানে তাকে বলা হয়, আপনার পাসপোর্ট রেডি হয়েছে অপেক্ষা করেন বিকেলে নিতে পারবেন। কিন্তু বিকেলে গিয়ে পাসপোর্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তাকে সাতদিন পরে দেখা করতে বলা হয়।
কথা অনুযায়ী, আবারও আমপাং অফিসে যোগাযোগ করেন জহিরুল। অনলাইনে দেখায় পাসপোর্ট রেডি। পরে ওইদিনও তাকে বিকেল পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়। বিকেলে বলা হয়, তার পাসপোর্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিন আসতে হবে। এবার তাকে পাঁচদিন পর যেতে বলা হয়।
এভাবে কয়েক দফায় ঘোরানোর পর সুশান্ত নামের এক কর্মকর্তা তাকে নতুন করে আবেদন করার পরামর্শ দেন। এ কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে জহিরুলের।
তখন তার হাতে সময় ছিল মাত্র ১৪ দিন। কিন্তু উপায়ান্তর না পেয়ে আবারও নতুন করে মার্চের ১ তারিখে পাসপোর্টের আবেদন (এনরোলমেন্ট MYS200000028886) জমা দেন। এবার প্রদানের সম্ভাব তারিখ দেওয়া হয় ১৫ মার্চ।
জহিরুল ইসলাম আশায় ছিলেন- এবার পাসপোর্ট হাতে পাবেন, কিন্তু এবারও ঘটে আগের পুনারাবৃত্তি। অফিসে গেলে তাকে বসিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যায় বলা হয়, তার পাসপোর্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচদিন পরে যেতে বলা হয়। কথা মতো সেখানে গিয়েও আশাহত হন প্রবাসী জহিরুল ইসলাম।
পরে যোগাযোগ করেন ফার্স্ট সেক্রেটারি মসিউর রহমানের সঙ্গে। তার টেবিলে গিয়ে রশিদ জমা দিলে তিনি তা ছুঁড়ে ফেলে দেন। অনেকটা অপমান করে তাকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই প্রবাসী।
তিনি বলেন, চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছি। অনেক টাকা গচ্চা গেছে কিন্তু পাসপোর্ট পাইনি। আবার অবৈধ হয়ে গেছি। এখন পুলিশের হাতে পড়লে আর রক্ষে নাই। জেলে পচতে হবে। তারপর দেশে ফেরত। রঙিন স্বপ্ন এখন ধূসর হয়ে গেছে।
‘হাইকমিশনের লোকজন প্রবাসীদের মানুষ বলেই মনে করেন না। আমাদের তারা গরু-ছাগল মনে করেন। সেভাবেই আচরণ করেন,’ যোগ করেন চিন্তামগ্ন এই বাংলাদেশি।
যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট) মসিউর রহমান বলেন, ‘এই পাসপোর্টটা নিয়ে অনেক কাহিনী হয়ে গেছে। এমন কোনো দালাল নেই যে তার কাছে সে (জহিরুল) যায়নি। ভিসা জটিলতার কারণে আমরা তার জন্য ঢাকায় ফোন করে দ্রুত পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করেছি। অথচ দেখেন আমাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে মাত্র তার পাসপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি। একজনের পাসপোর্ট অন্যজনকে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
‘দু’দফায় পাসপোর্টের আবেদন করতে হলো কেন? তার কাছে দু’টি রিসিপ্টও রয়েছে’ এমন প্রশ্নে মসিউর রহমান বলেন, আগের আবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি একটার কথা জানি। পাসপোর্ট রেডি হয়েছে কালকে জহিরুল পেয়ে যাবেন।’
জহিরুল ইসলামের সঙ্গে দুর্ব্যবহার প্রসঙ্গে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার দেখাই হয়নি। তিনি কোনোদিনই আমার কাছে আসেননি।’
সৌজন্যে- বাংলানিউজ২৪