Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

dollarপ্রতি মাসেই বাড়ছে প্রবাসী আয়। গত মার্চে ১৩০ কোটি চার লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা এর আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৫ কোটি ডলার বেশি। এছাড়া গত বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। বছরের শুরু থেকেই ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের কারণেই প্রবাসী আয় বেড়েছে বলে মনে করছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) ৯ মাসে এক হাজার ৭৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে দেশে ৯২০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মার্চে ১০৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। এ হিসাবে মার্চে আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

chardike-ad

আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পণ্য আমদানি বাড়ার কারণে বাজারে এখন ডলারের চাহিদা বেশি। সে কারণে ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই রেমিট্যান্স আনতে বেশি আগ্রহী। অন্যদিকে, বর্তমানে বেশি টাকা পাওয়ার কারণে প্রবাসীরাও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এছাড়া অবৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশকিছু উদ্যোগও কাজ করেছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা। অন্যদিকে, ডলারের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোও রেমিট্যান্স আনতে আগ্রহী হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আমদানির তুলনায় রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে অনেক কম। বিদেশি ঋণের পরিশোধও বেড়েছে। এতে করে সরবরাহের তুলনায় বেশি চাহিদা তৈরি হয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ডলারের। সংকট মেটাতে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাড়তি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত ১৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে, যার বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ১৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। অথচ এর আগের কয়েক অর্থবছর সরবরাহ বেশি থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর ডলার কিনেছে। ফলে তখন বাজারে প্রচুর উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল।

ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, বাড়তি চাহিদার কারণে হু হু করে দাম বাড়ছে ডলারের। গত এক বছরে আন্তব্যাংকেই প্রতি ডলারের দাম তিন টাকা ৪১ পয়সা তথা চার দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ৮২ টাকা ৯৬ পয়সায় উঠেছে। আর আমদানি দায় মেটাতে প্রতি ডলার কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৮৩ টাকা দরে। এক বছর আগেও আমদানিতে প্রতি ডলার ৭৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮০ টাকা ৫০ পয়সা ছিল। ডলারের বৃদ্ধির এ প্রবণতা রফতানিকারক ও রেমিটারদের জন্য খুশির খবর হলেও আমদানিতে বেশি খরচ হওয়ায় চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে এক কোটি ১৩ লাখ ডলার এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ৩৮ লাখ ডলার এসেছে। বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে সাত কোটি ৭১ ডলার এসেছে।

তথ্যমতে, গত ২০১৬-১৭তে আগের (২০১৫-১৬) অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম রেমিট্যান্স আসে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। শুধু সেপ্টেম্বরই নয়, বিগত বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এ রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো এ বৈদেশিক মুদ্রা।