তাদের দেখলে মনে হবে কোনো করপোরেট অফিসে বড় পদে চাকরি করে, কিংবা কোনো বড় ব্যবসায়ী। বাচনভঙ্গি ও চালচলনে আধুনিকতার ছোঁয়া। হঠাৎই আপনার সামনে হাজির হয়ে বিনয়ের সঙ্গে দেবে সালাম। আপনিও থমকে দাঁড়াবেন, কৌতূহলী হয়ে উঠবেন। আর এই কৌতূহলের সুযোগ নিয়েই তারা হাতিয়ে নেবে আপনার টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি।
হ্যাঁ, এরাই ‘সালাম পার্টি’। রাজধানীর এ রকমই একটি ‘সালাম পার্টি’ চক্রের পাঁচ সদস্যকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে পল্টন থানার পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. জিতু (৪৯), মো. মিজান (৩৫), মো. আকতার হোসেন (৪৫), মো. রিপন (২৮) ও মো. পিন্টু মিয়া (৩১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ চক্রের সদস্যরা কেতাদুরস্ত হয়ে চলাফেরা করে। দামি শার্ট, প্যান্ট, জুতা এমনকি শীতকালে কোট ও টাই পরে ঘুরে বেড়ায় টার্গেটের সন্ধানে। বিশেষ কায়দায় তারা চাকু, চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র লুকিয়ে রাখে প্যান্ট বা কোটের পকেটে, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না।
ভদ্রলোকের বেশ ধরে তারা দুই-তিন ঘণ্টার জন্য রিকশা ভাড়া করে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে। ব্যাংক অথবা এটিএম বুথের পাশে একজন অবস্থান নিয়ে থাকে। নিজেদের টার্গেট পেয়ে গেলে তার পিছু নেয় তারা। পথের মধ্যে মোবাইল ফোনে তাদের সঙ্গীদের জানিয়ে দেয় টার্গেটের অবস্থান। পিছু নেয়ার একপর্যায়ে সুবিধামতো কোনো জায়গায় তার সামনে গিয়ে একজন সালাম দিয়ে বলে, ‘ভাই, কেমন আছেন? আপনি অমুক না?’
এরই মধ্যে চক্রের ছদ্মবেশী আরো কয়েকজন রিকশাটি ঘিরে ফেলে। নিজেরা টার্গেট ব্যক্তির আশপাশে একটা জটলা তৈরি করে। এ সুযোগে অন্য সহযোগীরা তার সর্বস্ব লুটে নেয়। তারপর খুব দ্রুত সটকে পড়ে। এভাবে হঠাৎ করে জটলা শুরু হয় আর হঠাৎ করেই তা শেষ হয়ে যায়। মাঝখান থেকে লুট হয়ে যায় ভিকটিমের টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ইত্যাদি।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে পুলিশ জানায়, চক্রটি নির্দিষ্ট এলাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ করে। এক এলাকার সিন্ডিকেট অন্য এলাকায় যায় না। এরা এলাকাভিত্তিক চার-পাঁচজনের দল হয়ে কাজ করে। গ্রেপ্তার হওয়া চক্রটি রাজধানীর শান্তিনগর, পল্টন ও কাকরাইল এলাকায় কাজ করত।
এ চক্রের হাত থেকে নিরাপদ থাকতে সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। ব্যাংক কিংবা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে বেরোনোর সময় আশপাশে নজর রাখতে হবে- সন্দেহভাজন কেউ আপনাকে তাদের টার্গেট বানাতে ওত পেতে রয়েছে কি না। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। ঢাকা টাইমস।