বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) সাহজাহান কবিরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় বগুড়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও শহর যুবলীগের দফতর সম্পাদক মোস্তাকিম রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কৈগাড়ি এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। শাজাহানপুর থানায় এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোস্তাকিম ছিলেন প্রধান আসামি। পুলিশ এ হামলার ঘটনায় মোস্তাকিমের সহযোগী যুবলীগের আরও তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
শুক্রবার সকালে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশারাফ ভূঁইয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
হামলার পরপরই গ্রেফতার হওয়া মোস্তাকিমের সহযোগী যুবলীগ কর্মী অন্য তিনজন হলেন- সুত্রাপুরের রমজান আলীর ছেলে হাসান আলী (২৬), ঠনঠনিয়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে জীবন (২১) ও একই এলাকার আবু তালেবের ছেলে রাসেল মিয়া (৩০)।
পুলিশ সুপার আলী আশারাফ ভূঁইয়া জানান, গ্রেফতার পৌর কাউন্সিলর মোস্তাকিমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা সুজানুর রহমান সুজন হত্যাকাণ্ডসহ চাঁদাবাজি, মারপিট ও দখলের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার একটি বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। এই বাহিনীর সদস্য শহরের সুত্রাপুর, খান্দার, মালগ্রাম, সিলিমপুর, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা, কৈগাড়ি, ফুলবাড়ি, ফুলদীঘি, ঠনঠনিয়া ও হিন্দুপাড়া এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলই এদের প্রধান কাজ।
তিনি আরও জানান, বগুড়ার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস শহরের খান্দার এলাকা হওয়ার কারণে এই অফিসে মোস্তাকিমসহ তার সহযোগীরা অবৈধ সুবিধা আদায় ও চাঁদা আদায়ের জন্য শুরু থেকেই চেষ্টা করছিল। পাসপোর্ট অফিসের বর্তমান সহকারী পরিচালক (এডি) সাহজাহান কবির এই সুবিধা না দেয়ার কারণে পূর্ব পরিকল্পনা মতোই তার ওপরে হামলা চালানো হয়।
পুলিশ জানায়, হামলার ঘটনার পর বগুড়া শহর যুবলীগের দফতর সম্পাদক মোস্তাকিম ভারতে পালানোর চেষ্টা করেন। তিনি বগুড়ার একাধিক পুলিশি বেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে রাতে সীমান্ত এলাকা দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর থানার ডাঙ্গাপাড়া সাতকুড়ি বাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান নেন। এই স্থান দিয়ে বিনা পাসপোর্টে দালালের মাধ্যমে তারকাঁটার বেড়া ডিঙ্গিয়ে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা যায়। পরে অন্য লোকের মাধ্যমে পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়া হয়। সকালেই মোস্তাকিমের ভারতে প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ হেডকোয়াটার্স ইন্টালিজেন্স উইং ও দিনাজপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করে বগুড়া ডিবি পুলিশ। মামলার ২নং আসামী মোস্তাকিমের একান্ত সহযোগী শহর যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আদিলসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার করতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) সাহজাহান কবিরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় অফিস সহকারী সাজেনুর রহমান বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় যুবলীগ নেতা পৌর কাউন্সিলর মোস্তাকিমসহ যুবলীগের ১১ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার হাতে রয়েছে।
জেলা ডিবি পুলিশের ওসি নুরে আলম সিদ্দিকি জানান, মোস্তাকিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঘুষ, দুর্নীতি ও দালালমুক্ত করার কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কৈগাড়ি এলাকায় পৌর কাউন্সিলর মোস্তাকিমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা সহকারী পরিচালক (এডি) সাহজাহান কবিরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও মাথায় রামদা দিয়ে কোপানো হয়। ঘটনার পরপরই মুমূর্ষু অবস্থায় সাহজাহান কবিরকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থান অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।