পুরো বিশ্বে শুরু হয়েছে হইচই পরে গিয়েছে উত্তর কোরিয়া থেকে চীনে পৌঁছেনো কটি রহস্যময়ী সবুজ ট্রেন নিয়ে। ট্রেনকে কেন্দ্র করে বেইজিংয়ের রাস্তায় নিরাপত্তার নিরাপত্তার বলয় দেখে জল্পনার পারদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। শত্র-মিত্র সবাই নিশ্চিত, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনই রয়েছেন ওই ট্রেনে।
দুই দেশের কর্তৃপক্ষের ঢাক ঢাক গুড় গুড় মনোভাবে শেষ পর্যন্ত সেই গুঞ্জনই সত্যি হল। সোমবার ঢাকঢোল পিটিয়ে চীন নিজেই জানান দিল- উন এসেছে। আগমনের মতো প্রস্থানেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল দেখার মতো। ট্রেনে ছিলেন কিম ও তার স্ত্রী রি সোল জু। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, সোমবার রাতে বেইজিংয়ের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনে পৌঁছায় সবুজ রঙের ট্রেনটি।
রহস্যময় ওই ট্রেনে কে ছিলেন- এটা সামনে আসার পর এবার আবার নতুন শোরগোল উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এখন একটাই আলোচনা- কী ছিল কিমের ট্রেনে? কিমকে বহনকারী পুরো ট্রেনে ছিল মোট ২১টি বগি। প্রতিটি বগির রং গাঢ় সবুজ। ট্রেনের প্রত্যেকটি কামরাই বুলেটপ্র“ফ।
সাধারণ বগির তুলনায় এগুলোর ওজনও কয়েক গুণ বেশি। ওজন বেশি থাকায় ট্রেনের গতি অপেক্ষাকৃত কম। ধারণা করা হচ্ছে, কিমের সবুজ ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় মাত্র ৩৭ মাইল। আয়েশি সব আয়োজনে ঠাসা ছিল কিমের ট্রেন। দীর্ঘ ভ্রমণে মনোরঞ্জনের জন্য ছিল একদল নারী। খাবারের ক্ষেত্রে বাবা-দাদার চেয়ে কিমের পছন্দ আলাদা। সুইস চিজ, কাঁকড়া ও ক্রিস্টাল শ্যাম্পেন (মদ) ও হেনিসি কগন্যাক (মদ) বেশি পছন্দ করেন তিনি। পুরো ট্রেনে ছিল এসবের ভরপুর আয়োজন। কিমই যে এবার প্রথম লুকিয়ে ট্রেন-ভ্রমণ করলেন, চীনে গেলেন তা নয়।
কিমের মতোই ট্রেনে বিদেশ সফরে যেতেন তার বাবা ও দাদা। ২০০৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাদের ট্রেনে অন্তত ৯০টি বগি থাকত। এ বগিগুলোতে আছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। মূলত তিনটি ট্রেনের বহর নিয়ে বিদেশে যান উত্তর কোরিয়ার নেতা। বহরের প্রথমে থাকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একটি উন্নতমানের ট্রেন।
এরপরই থাকে উত্তর কোরীয় নেতাকে বহনকারী ট্রেন। আর সবার শেষে থাকে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী, দেহরক্ষী ও প্রয়োজনীয় রসদ বহনকারী আরেকটি ট্রেন। তিন ট্রেনের প্রথমটিতে থাকেন প্রায় ১০০ নিরাপত্তাকর্মী। তারা মূলত বিভিন্ন রেলস্টেশন ও রেললাইনে তল্লাশি ও অনুসন্ধান চালান। প্রয়াত নেতা কিম জং ইলের সময় থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। এই নিরাপত্তাকর্মীরা বোমা ও অন্যান্য হুমকির মোকাবিলা করেন।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কিমের ট্রেনের ভেতরের ফুটেজ খুব কমই ব্যবহার করেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত নানা স্থির ও ভিডিও চিত্রে এই ট্রেনের ভেতরের বিভিন্ন দৃশ্য প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক ভিডিওতে একটি সম্মেলন কক্ষ দেখানো হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, এই ট্রেনে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।
সম্মেলন কক্ষ, ডিনার কক্ষ, ব্যাংকুয়েট হল ছাড়াও আছে অফিস ঘর। ট্রেনে বসেই রাষ্ট্রীয় সব কাজ করতে পারেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা। এমনকি উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দেশটির বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে মোট ২০টি বিশেষ রেলস্টেশন। ট্রেনবহরকে নজরে রেখে আকাশে উড়তে থাকে সামরিক হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজ।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কিমের বাবা কিম জং ইল ও দাদা কিম ইল সাং বিমানে চড়তে ভয় পেতেন। এ কারণেই তারা ট্রেনে ভ্রমণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বাপ-দাদার মতো কিমও কি তাহলে বিমান ভ্রমণে ভয় পান- এ প্রশ্ন এখন উঠছে। যদিও দেশের অভ্যন্তরীণ সফরে বিমানে চড়েন কিম।