বাংলাদেশ বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে আসন খালি থাকে অথচ বুকিং দেয়ার সময় টিকিট পাওয়া যায় না। এর ব্যাখ্যা হিসেবে সংসদীয় কমিটিসহ বিভিন্ন মহলকে তারা বলছে আসন খালির কারণ হিসেবে যাত্রীরাই দায়ী। দেশের যানজটকেও কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে এসব ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় কমিটি।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিমান কোম্পানি ও ট্রাভেল এজেন্সির যোগসাজসে বিমানের আসন খালি থাকলেও টিকিট বিক্রি করা হয় না। এ জন্য অন্যান্য কোম্পানির টিকিট বিক্রি বাড়ে। পক্ষান্তরে বিমানের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিল বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ব্যাখ্যা পাওয়ার বিপরীতে ছয়টি কারণ দেখিয়েছে বিমান। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির ৩৫তম বৈঠকে এসব কারণ তুলে ধরা হয়।
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহ্জাহান কামাল, অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ, মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল আশরাফ খান এবং সাবিহা নাহার বেগম অংশ নেন।
প্রতিষ্ঠান প্রথমেই অস্বীকার করে বলে, বিমানের অবিক্রিত আসন থাকার পরও টিকিট পাওয়া যায় না -এ অভিযোগ যথাযথ নয়। বিমানের আসন সংরক্ষণ পদ্ধতি পুরোপুরি কম্পিউটাররাইজড ও অনলাইন নিয়ন্ত্রিত বিধায় বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যাত্রীরা এবং ট্রাভেল এজেন্সি যেকোনো রুটের আসন সংরক্ষণ তথ্যাটি জানতে পারেন।
আসন খালি যাওয়ার ১ নম্বর ব্যাখ্যায় বলা হয়- নির্দিষ্ট রুটে ভ্রমণের জন্য যাত্রীরা বিমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন দেশ থেকেও ব্যক্তিগত আয়োজনে বাংলাদেশ বিমান বা অন্য কোনো বিমানে ঢাকায় আসেন। সেক্ষেত্রে যাত্রীর শেষ মুহূর্ত ব্যক্তিগত অথবা আগমনী বিমানের বিলম্বে ঢাকায় পৌঁছার কারণে যাত্রীরা যথা সময়ে বিমান বন্দরে পৌঁছতে পারে না। ফলে এসব আসন খালি রেখেই বিমান উড়াল দেয়।
দ্বিতীয় কারণে হিসেবে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্দিষ্ট ফ্লাইটের যাত্রীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসেন। ফ্লাইটের জন্য কিছু পরিবহনগত সমস্যা, রাস্তায় অতিরিক্ত ট্রাফিক জ্যাম ও আবহাওয়া জনিত কারণেও যাত্রীরা সময়মত বিমান বন্দরে উপস্থিত হতে পারেন না। এসব কারণেও আসন খালি রেখে বিমান উড়াল দেয়।
তৃতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়, কোনো কোনো সময় শেষ মুহূর্ত টেকনিক্যাল অথবা আবহাওয়া জনিত সমস্যার জন্য নির্দিষ্ট উড়োজাহাজ পরিবর্তন করে অপেক্ষাকৃত অধিক আসনের বিমান পরিচালনা করতে হয়। এক্ষেত্রেও আসন খালি রেখে বিমান পরিচালনা করা হয়।
চতুর্থ কারণে হিসেবে বলা হয়, কনফার্ম টিকেট ক্রয় সত্ত্বেও অনেক যাত্রী ভ্রমণ করতে পারে না। যেমন-পারিবারিক প্রয়োজনে শেষ মুহূর্তে ভ্রমণের মত পরিবর্তন, ট্রাভেল ডকুমেন্ট ক্রুটি থাকার কারণে ইমিগ্রেশন শাখা হতে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয় না।
পঞ্চম কারণ হিসেবে বলা হয়, অনেক সময় ভিসা কার্যক্রম শেষ হওয়ার পূর্বেই যাত্রীরা টিকিট কনফার্ম করে রাখেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভিসা না পাওয়া যাত্রা বাতিল করতে হয়।
ষষ্ঠ কারণ হিসেবে জানানো হয়, যাত্রী নিজে কিংবা পরিবারের অন্য কেউ হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরিবারিক দায়িত্বের কারণে যাত্রা নিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে যাত্রা বাতিল করতে বাধ্য হন বা নির্দিষ্ট দিনে বিমান বন্দরে উপস্থিত হতে পারেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, এসব কারণ দেখিয়ে লাভ নেই। বিশ্বের অন্যান্য এয়ারলাইন্স যে নিয়মে চলে বাংলাদেশ বিমানও সেই নিয়মে চলে। আমাদের প্রশ্ন হলো- অন্যান্য বিমান তো সিটি ফাঁকা রেখে বলে না আসন নেই। তাই আমরা কারণ দেখতে চাই না, সমস্যার সমাধান চাই।
কমিটির সিনিয়র সদস্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ বলেন, বিমানের দেয়া ওইসব ব্যাখ্যা আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের জানা মতে ভিসা ছাড়া কখনও টিকিট ক্রয় করা যায় না।