যুদ্ধের সময় গুলিবিদ্ধ রাশিদা আক্তারের চিকিৎসা হয়নি ৪৭ বছরেও। ডাক কাঁধ ও হাতের সংযোগস্থলে গুলি নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হয়ে থাকেন তিনি। যৌবনে সয়েছেন কোনোমতে। কিন্তু জীবনের শেষ বেলায় এসে আর পারছেন না।
রাশিদা চান, কেউ তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মীরা চান, সরকার রাশিদার চিকিৎসার ব্যবস্থা নিক।
রাশিদার বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গোপালাশ্রম বাড়িতে। যখন তিনি গুলিবিদ্ধ হন, তখন তার বয়স ২০। এখন প্রায় ৬৭। কিন্তু দেখলে মনে হবে থুত্থুরে বুড়ি। গুলির প্রভাব, ধারণা স্থানীয়দের।
মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে গুলিবিদ্ধ হন রশিদা। বাংলা দিনপঞ্জির তারিখটিও মনে আছে পরিবারটির।
সেদিন ১৩৭৮ সালের ৭ ভাদ্রর দুপুর বেলা। কেন্দুয়া উপজেলার চিথোলিয়া পাল বাড়িতে আগুন গিয়ে পাশের গোপালাশ্রম গ্রামে হানা দেয় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকাররা।
সেদিনকার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল হাশেম বলেন, ‘মিলিটারি আর রাজাকাররা নির্বিচারে গুলি চালায়, আগুন দেয়, লুটপাট করে। গুলিতে সেদিন সাতজন নিহত ও ১৫ জনের মত আহত হয়।’
‘সেদিন গোপালাশ্রম গ্রামের রশিদা আক্তার গুলিবিদ্ধ হলেও বেঁচে যান। এখনও গুলিটি বিদ্ধ হয়ে রয়েছে। আজও তার চিকিৎসা জুটেনি’- বলেন আবুল হাশেম।
রাশিদার বয়স ৬৭ হলেও ৪৭ বছর ধরে গুলির প্রভাবেই কিনা, ৮০ বছরের ছাপ শরীরে। বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় বিছানায় শুয়ে আছেন। কথাও বলেন তিনি। জানালেন, জীবন সায়াহ্নে এসেও সেদিনের বিভীষিকাময় ঘটনা নিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়।
রশিদার একমাত্র মেয়ে রহিমা আক্তার জানান, টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা করা যায়নি। শরীরের ভেতরে রয়ে যাওয়া গুলিটির কারণে প্রায়ই অসহনীয় ব্যথায় কাতর হয়ে যান রশিদা। ব্যথানাশক ওষুধ খাইয়ে কোন রকমে দিনগুজরান করছেন তিনি।
মায়ের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে দিনমজুর ছেলে ইছহাক মিয়া বলেন, ‘মায়ের আর আগের দিন নাই। অহন বেদনা (ব্যথা) আর সইজ্য অয় না। কান্দে (কাঁদে)।’
চিকিৎসা করাচ্ছেন না কেন-জানতে চাইলে ইছহাক দিয়া বলেন, ‘অনেক টেহা (টাকা) লাগব। কই পায়াম (পাব)?’
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ মিয়া বলেন, ‘পরিবারটি অত্যন্ত গরিব। মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা চালায় তারা। তাদের পক্ষে রশিদার চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব না। তাই এতদিনেও তেমন চিকিৎসা করাতে পারেনি। এখন রশিদার চিকিৎসার দায়িত্ব নিক সরকার।’
কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে রশিদা আক্তারের ত্যাগ রয়েছে। এত বছরেও তার অবদানের মূল্যায়ন বা তার প্রতি নূন্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ রাষ্ট্র বা কোন সরকারই দেখায়নি।’
‘এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায়। দাবি করছি, রশিদা আক্তারের সুচিকিৎসার দায়িত্ব নিক সরকার।’ ঢাকা টাইমস।