টেবিলের ওপর ল্যাপটপ। রয়েছে মুঠোফোন ও ফাইলের স্তূপ। প্রতিটি ফাইলে স্বাক্ষর করার আগে টাকা গুনে ড্রয়ারে রাখেন তিনি। সরকারি কক্ষে বসেই ঘুষের কারবার চালাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আড়াইহাজার উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডলের ঘুষ নেয়ার এমন একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। ওই ভিডিওটি এখন ফেসবুকে ভাইরাল।
ভিডিওতে দেখা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডলের টেবিলের ওপর ফাইলের স্তূপ। প্রতিটি ফাইল স্বাক্ষর করার আগে তিনি ঘুষ নিচ্ছেন। পাশ থেকে একজন ফাইল এগিয়ে দিচ্ছেন। আর প্রতিটি ফাইলের সঙ্গে টাকা নিয়ে ড্রয়ারে রাখছেন তিনি।
এদিকে, সাব-রেজিস্ট্রার ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না এমন প্রতিবাদে গতকাল বুধবার থেকে আড়াইহাজারে দেড় শতাধিক দলিল লেখক একযোগে কর্মবিরতি পালন করে সাব-রেজিস্ট্রারের প্রত্যাহার চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ নেয়ার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, আড়াইহাজারের সাব-রেজিস্ট্রার দুই মাস আগে বদলি হওয়ার কারণে জেলার বন্দর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডলকে আড়াইহাজার উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়।
তিনি এখানে যোগ দেয়ার পর থেকেই প্রতিটি দলিলের জন্য মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করেন দলিল লেখকদের কাছ থেকে। তার দাবিকৃত ঘুষ না দিতে পারলে কারো দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। সপ্তাহে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার আড়াইহাজার সাব-রেজিস্ট্রারি অফিসে অফিস করার কথা থাকলেও প্রায়ই অফিসে আসেন না তিনি।
দিন দিন তার ঘুষের দাবি বেড়ে যাওয়ায় আড়াইহাজার উপজেলার দেড় শতাধিক দলিল লেখক গতকাল বুধবার (২১ মার্চ) থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন।
বুধবার দলিল লেখকগণ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে বিক্ষোভ পালন করে সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডলের প্রত্যাহার দাবি করে। বৃহস্পতিবারও একই দাবিতে বিক্ষোভ হয়। তাকে বদলি করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করবে বলে ঘোষণা দেন দলিল লেখকরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ নেয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষিপ্ত দলিল লেখকদের বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার দুপুরের পর সাব-রেজিস্ট্রারকে অফিসে দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবারও দেখা মেলেনি তার।
ঘুষ নেয়ায় ঘটনাটি সামনে আসলে গত দুইদিন ধরে অফিসে আসেননি তিনি। দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ থাকায় দলিল করতে আসা সাধারণ লোকজন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এক কর্মচারী জানান, সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন দলিল লেখক প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক অবৈধ দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য সাব-রেজিস্ট্রারকে চাপ দেন। তারা সরকারি ফি ছাড়াই দলিল সম্পাদন করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে সাধারণ দলিল লেখকদের জিম্মি করে দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ রেখেছেন।
বিষয়টি জানতে সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডলের মোবাইল নম্বরে বার বার ফোন করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সৌজন্যে- সমকাল