দক্ষিণ কোরিয়ায় অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু আইন পরিবর্তন করেছে দেশটির আইন মন্ত্রণালয়। চলতি মাস মার্চ থেকেই এই পরিবর্তিত নতুন আইনগুলো কার্যকারিতা শুরু হয়েছে। দেশটির আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে মূলত পড়াশোনার নাম করে যারা কাজ করতে চায় তাদের জন্যই কঠোর হচ্ছে সরকার। পরিবর্তন হওয়া আইনগুলো হলো-
পার্ট টাইম কাজে বাধ্যবাধকতা: বর্তমান আইন অনুযায়ী কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে আসা শিক্ষার্থী এবং স্নাতকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘন্টা এবং মাস্টার্স, পিএইচডি’র শিক্ষার্থীরা ৩০ ঘন্টা কাজ করার সুযোগ পায়। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার অনুমতি গ্রহণের সময় কোরিয়ান ভাষার দক্ষতা পরীক্ষার ফলাফল (টপিক), ক্লাসে উপস্থিতি এবং রেজাল্টকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে পার্ট টাইম চাকরির অনুমতি পেতে হলে, কোরিয়ান ভাষায় অধ্যয়নরতদের ক্ষেত্রে টপিক লেভেল ২ এর অধিক থাকতে হবে। আন্ডারগ্রাজুয়েটে অধ্যয়নরতদের ক্ষেত্রে ২ বছর (৪ সেমিস্টার) পর্যন্ত টপিক লেভেল ৩ এবং তৃতীয় বছর থেকে টপিক লেভেল ৪ এর অধিক থাকতে হবে। এছাড়া আন্ডারগ্রাজুয়েটে গড় জিপিএ ‘সি’ উপরে থাকতে হবে। মাস্টার্স এবং পিএইচডির ক্ষেত্রে ন্যুনতম লেভেল ৪ থাকতে হবে। ছুটির দিন এবং বছরের দুইটি ভ্যাকেশনে কাজের অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথীল থাকবে।
ভাষা শিক্ষার ভিসা মেয়াদ বৃদ্ধিতে কড়াকড়ি: কোরিয়ান ভাষা শিখতে আসা শিক্ষার্থীদের (ডি-৪-১ ভিসা) জন্য নিয়ম সবচেয়ে বেশি কঠোর করা হয়েছে। কোন সেমিস্টারে ৫০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকলে এবং উপস্থিতি পরপর দুই সেমিস্টার এ ৭০ শতাংশের কম হলে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে দিবে না ইমিগ্রেশন। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে। ভাষা শিক্ষার সময় কোর্সের মাঝে এক মাসের বেশি গ্যাপ থাকতে পারবে না। কোরিয়ান ভাষা কোর্সের নাম করে কোরিয়াতে এসে কারখানাগুলোতে কাজ করা অভিযোগেই কঠোর হচ্ছে ইমিগ্রেশন।
নিজ দেশ থেকে নিজের একাউন্টে টাকা জমা হতে হবে: নিজেদের অর্থে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগে কোরিয়ার একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেখালেই হতো। নতুন নিয়মে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিজের দেশ থেকে নিজ একাউন্টে টাকা জমা হওয়ার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। এই ক্ষেত্রে মাসিক হিসেবে গড়ে ১০ লাখ উওন দেখাতে হবে। যদি কোন ছাত্রছাত্রী কোরিয়ায় পার্ট টাইম চাকরি করে তাহলে তার আয়কৃত অর্থ নিজের একাউন্টে জমা হলে সেটাও হিসাবে দেখানো যাবে। সরকারী স্কলারশীপ কিংবা বাবা-মা কোরিয়াতে বসবাসরত থাকলে এই শর্ত প্রযোজ্য হবে না।
স্বল্পমেয়াদি ভিসা থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় রুপান্তরে নিষেধাজ্ঞা: অনেকেই ট্যুরিস্ট ভিসা কিংবা বিজনেস ভিসায় কোরিয়া প্রবেশ করে কোরিয়ান ভাষা প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তি হন। পরবর্তীতে নিয়মিত ডিগ্রী কোর্সগুলোতেও ভর্তি হয়ে যান অনেকেই। কোরিয়াতে সবচেয়ে বেশি অবৈধভাবে বসবাস করেন এমন দেশের তালিকা থেকে প্রথম ২১ টি দেশের নাগরিকরা স্বল্পমেয়াদি ভিসা থেকে কোরিয়ান ভাষা কিংবা অন্য কোন কোর্সে স্টুডেন্ট ভিসায় পরিবর্তন করতে পারবে না।
মেধাবীর জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি: ইউনিভার্সিটিগুলোতে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রী সম্পন্নকারী ছাত্রছাত্রীদের জন্য চাকরির সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘমেয়াদি রেসিডেন্স কিংবা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রেও একাডেমিক রেকর্ডকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এছাড়া সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে রিসার্চার হিসেবে কাজ করতে পারবে। এর আগে কোরিয়ার সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা ছিল।