“প্রায় একদিন হইছে বোন ফিরা আসছে, এখনো একটা দানা মুখে তুলে নাই সে। পানিও খায় না। জোর করলে আরবি ভাষায় কিসব বলে!” “সৌদি আরবে নিয়া তারে দিয়া কী করাইছে, আমরা জানি না। কিন্তু সে ফিরত আসছে অসুস্থ। হাতে কোন টাকাপয়সা বা জিনিসপত্র নাই। সাথে কথা বলতাছে সব উল্টাপাল্টা।”
“তার মাথায় মনে হয় গণ্ডগোল হইছে, মানসিক ভারসাম্য নাই।” কথাগুলো বলছিলেন গত রাতে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা আরো ২৩জন নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে দেশে ফেরা একজনের ভাই। নরসিংদীর বাসিন্দা লোকমান হোসেন জানিয়েছেন, গত নভেম্বরে সৌদি আরবে যান তার বোন।
“যে দালাল তারে নিয়া গেছিল, তারে আমরা চিনি। সে বলছিল এক বাসায় কাজ করবো, আর তাদের বাসার বাচ্চা স্কুলে আনা নেয়া করতে হবে।” “ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আমার বোন টাকাও পাঠাইছে।” কিন্তু এ মাসের মাঝামাঝি তাদের একজন আত্মীয় যিনি রিয়াদ বিমানবন্দরে কাজ করেন, তিনি ফোন করে মি: হোসেনকে জানান, যে বাসায় কাজ করত সেখান থেকে পালিয়ে আমার বোন এয়ারপোর্টে চলে আসছে।
তার শরীরের অবস্থা ভালো না। এরপর তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মি: হোসেন জানান, তার বোনের বারো বছর বয়সী একটি সন্তান আছে। সাত বছর আগে বোনের স্বামী সন্তান আর স্ত্রীকে ছেড়ে চেলে যান। এরপর থেকে বাবা আর ভাইয়ের আশ্রয়েই ছিলেন। গত বছর যখন কাজের জন্য বিদেশে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়, তার বোন তখন পরিবারের কেউ আপত্তি করেনি।
জমি বিক্রি করে বিদেশ যাবার অর্থ জোগাড় করেন সবাই মিলে। কিন্তু এখন অসুস্থ এবং খালি হাতে ফিরে আসার পর, মি: হোসেন জানাচ্ছেন পরিবারের সামর্থ্য নেই তাকে ডাক্তার দেখানো কিংবা চিকিৎসা করানোর। বাংলাদেশের সরকারি হিসেবে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯ লক্ষ ৬০ হাজার শ্রমিক বিভিন্ন দেশে গেছে।
তবে বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে এই সংখ্যা ১০ লক্ষের বেশি। এর অর্ধেকের বেশি শ্রমিক গিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। এদের বড় একটি অংশ নারী শ্রমিক, যারা মূলত গৃহকর্মী হিসাবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যান। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া নারীরা প্রায়ই বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে। খবর- বিবিসি