হঠাৎ করেই পদত্যাগ করলেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট টিন চ৷ তার পদত্যাগের ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মহলে বিপুলভাবে আলোচিত হলেও ঠিক কী কারণে তিনি পদ ছাড়লেন সেই বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়৷ তবে এতে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, ফের সেনা শাসনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে এই দেশ৷ সেই সঙ্গে নোবেলজয়ী নেত্রী তথা সরকারের বিশেষ প্রধান আং সান সু চিকে ফের গৃহবন্দি করা হতে পারে বলেও জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে৷
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, সু চির ডানহাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট টিন চ৷ আগামী সাত দিনের মধ্যে তার স্থানে নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসবেন৷ তবে এর আগে পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবেক জেনারেল মিন্ট সোয়ে। গত বছর থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর অত্যাচার ও গণহত্যার অভিযোগে বারবার সংবাদ শিরোনামে এসেছে মিয়ানমার৷সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার কারণে দেশটির রাখাইন প্রদেশ থেকে আট লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ঢুকে পড়েছেন৷
এসব হামলার আন্তর্জাতিক অঙ্গন নিন্দায় মুখর হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ একে জাতি নির্মূল অভিযান হিসেবে অভিহিত করেছে। বিশ্বজোড়া সমালোচনার মুখেও সু চি দীর্ঘ সময় নীরব থাকায় তার অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়৷ ধারণা করা হয় সেনা শাসনের ঘেরাটোপেই আছেন তিনি৷ পরে তিনি সেনা অভিযানকে সমর্থন করায় বিষয়টি আরো ঘনীভূত হয়৷
প্রেসিডেন্টে পদত্যাগ : বিপদে সু চি?
মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি টিন চ পদত্যাগ করেছেন বলে তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। তবে কী কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন তা জানানো হয়নি। রাষ্ট্রপতির ফেইসবুক পাতায় অবশ্য বলা হয়েছে তিনি বিশ্রাম নিতে চান। সাত দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হওয়া না পর্যন্ত দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবেক জেনারেল মিন্ট সোয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকবেন। এর ফলে সাময়িকভাবে হলেও মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব আরো বেড়ে গেলে। এতে করে আরেকটু চাপে পড়তে পারেন সু চি।
বেশ কিছু দিন যাবত ৭১ বছর বয়সী টিন চ স্বাস্থ্যগত কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন। কাছাকাছি সময়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে খুব দুর্বল অবস্থায়। ২০১৬ সালে ঐতিহাসিক এক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন টিন চ। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে চলা সেনা শাসনের অবসান হয়। তবে সেটিকেও কাগজে শুধু কলমে অবসান বলে মনে করা হয়। সেই অর্থে প্রেসিডেন্ট হিসেবে টিন চ’র তেমন কোনো ক্ষমতা ছিল না।
দীর্ঘ দিনের বিরোধী নেত্রী অং সাং সু চিকে বলা হতো ‘ডি ফ্যাক্টো’ নেতা। তবে তার পরও আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো উচ্চপর্যায়ের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে অং সাং সু চি’র উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশটির সংবিধানে এমন একটি ধারা রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে বার্মিজ কারো সন্তান যদি অন্য দেশের নাগরিক হন তাহলে তিনি এমন দায়িত্ব নিতে পারবেন না।
অনেকেই মনে করে সু চিকে এমন ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতেই ইচ্ছা করে সংবিধানে এমন ধারা রাখা হয়েছে। অং সাং সু চি এক ব্রিটিশ নাগরিকের সাথে বিবাহিত ছিলেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। তার স্বামী এখন মৃত। টিন চ ছিলেন অং সাং সু চি’র দীর্ঘদিনের পুরনো বন্ধু ও উপদেষ্টা। তিনি সবসময় কথা খুব কম বলতেন। তবে তাকে সবসময় মিজ সূ চি’র খুব নির্ভরযোগ্য একজন সহযোগী বলে মনে করা হয়।
অং সাং সু চি’র দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক ভোটে জয়ী হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছে। বিশেষ করে রাখাইনে প্রদেশে। সেনা অভিযানের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে অং সাং সু চি ও তার দল। বিবিসি