Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অত্যাচারী জাপানের এক নির্যাতিত নিদর্শনের নাম খিয়ংবোকখুং প্রাসাদ। আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য জাতি জাপানিজরা ছিল এক সময় অতি নিষ্ঠুর ও নির্দয়। জাপানিজরা বার বার কোরিয়াতে আক্রমণ করেছে এবং মুছে দিতে চেয়েছিল কোরিয়ান জাতির অস্তিত্ব।

chardike-ad

যেভাবে নির্মিত হয় খিয়ংবোকখুং প্রাসাদ

১৩৯২ সালে গোরিও শাসনের (রাজত্বকাল ৪৭৫ বছর) অবসান ঘটে নিজ সেনাপতি ইসংগে (이성계 ) এর মাধ্যমে। এরপর জোসন সাম্রাজ্যের সূচনা ঘটান সেনাপতি ইসংগে (이성계 )  (পরবর্তী নামকরণঃ রাজা থেজো)। জোসন সাম্রাজ্যের রাজা থেজো (태조) কোরিয়ার রাজধানী গেসং থেকে হানিয়াং (বর্তমান নাম সিউল) এ স্থানান্তর করেন। রাজা থেজো ১৩৯৫ সালে রাজ্যের মূল ভবন খিয়ংবোকখুং প্রাসাদ নির্মাণ করেন। খিয়ংবোকখুং এর অর্থ স্বর্গের আশির্বাদ। এই প্রাসাদ থেকেই তিনি রাজ্য শাসনের কাজ সম্পন্ন করতেন।

জাপানের কোরিয়া আক্রমণ

জাপানের রাজা টয়োটমি হিদেয়োশির (Toyotomi Hideyoshi) নেতৃত্বে ১৫৯২-১৫৯৮ সালে কোরিয়াতে লাগাতার হামলা চালানো হয়। কোরিয়া দ্বীপ ও চীন দখলের উদ্দেশ্যে সংঘটিত এই যুদ্ধে বহু জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই যুদ্ধে কোরিয়ার একটি বড় অংশ দখলে নেয় জাপান। ১৫৯২ সালে খিয়ংবোকখুং প্রাসাদ আগুন দিয়ে ধ্বংস করে দেয় জাপান। পাথর ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এই প্রাসাদ। প্রায় ৩০০ বছর এভাবেই পরিত্যক্ত হিসেবেই ছিল খিয়ংবোকখুং ।

খিয়ংবুকখুং প্রাসাদের পুননির্মাণ

৩০০ বছর পর ১৮৬৫ সালে রাজা দেউনগুন (대원군) প্রাসাদটি আবার নির্মাণের নির্দেশ দেন। বিশাল বাজেটের অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে ১৮৬৭ সালে খিয়ংবোকখুং প্রাসাদ পুনরায় নির্মিত হয়।

শীতকালে খিয়ংবোকখুং প্রাসাদে লেখক

জাপানের হাতে কোরিয়ান রাণীর মৃত্যু

১৮৭৬ সালে জাপান কোরিয়ার জোসন রাজ্যকে বাধ্য করে “ট্রিটি অব গাংগুয়া” তে হস্তাক্ষর করার জন্যে। এই চুক্তির অর্থ ছিল কোরিয়া এখন থেকে জাপানের অঙ্গরাজ্য হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু জোসন রাজ্য তা অস্বীকার করে এবং চীনের কাছে (কিং রাজ্য) সাহায্যের চান। ফলে কোরিয়ার মাটিতে চীনের সাথে জাপানের যুদ্ধ (First Sino-Japanese war, 1894-1895) সংঘটিত হয়। চীন পরাজিত হলে জাপানের সাথে চুক্তি করতে সম্মত হয়। কিন্তু কোরিয়ার রাণী মিয়ংসেং (অপর নামঃ রাণী মিন) জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সাহায্য চায়।

ফলে ১৮৯৫ সালে ৮ই অক্টোবরে জাপানী এজেন্টরা খিয়ংবোকখুং প্রাসাদে রাণী মিয়ংসেং কে হত্যা করে এবং তার মৃত দেহকে প্রাসাদে লুকিয়ে ফেলে। কোরিয়ান রাজা ঘজং স্বপরিবারে খিয়ংবোকখুং প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যায়। এরপর আর কখনই এই প্রাসাদে ফেরা হয়নি রাজ পরিবারের।

জাপানের কোরিয়া দখল

চীনের সাথে যুদ্ধের পর পরবর্তীতে  রাশিয়াকে   (Russo-Japanese war, 1904-1905) যুদ্ধে পরাস্ত করে জাপান। ১৯১০ সালে কোরিয়া দখল করে এবং সকল কোরিয়ান ঐতিহ্য ধ্বংস করতে শুরু করে। অতঃপর খিয়ংবোকখুং প্রাসাদ পুনরায় ধ্বংস হয় জাপান দ্বারা। প্রাসাদ ভেঙ্গে ১৯২৩ সালে এর সামনে জাপানের ক্যাপিটাল বিল্ডিং তৈরী করা হয়।

১৯৩০ সালে খিয়ংবোকখুং প্যালেস

জাপানের অত্যাচার

নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, দখল, অধিকার বাজেয়াপ্তকরণ কিছুই বাদ রাখেনি জাপান। এমনকি কোরিয়ান ভাষাকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রও করে জাপান। কোরিয়ান ভাষার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। কোরিয়ান মহিলাদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করে তারা।

কোরিয়ার স্বাধীনতা

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে আমেরিকার কাছে পরাজিত হয় জাপান। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ জয়ের পর কোরিয়ার দক্ষিণ অংশ পায় আমেরিকা ও উত্তর অংশ পায় রাশিয়া। ১৯৪৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে।

খিয়ংবোকখুং প্রাসাদের সর্বশেষ নির্মাণ কাজ

১৯৬৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জং হি  প্রাসাদটির দেওয়াল ও দরজা পুননির্মাণ করেন এবং দরজায় কোরিয়ান ভাষা ব্যবহার করেন। ১৯৯৫ সালে জাপানের ক্যাপিটাল বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম ইয়ন সাম এবং খিয়ংবোকখুং প্রাসাদ পুনঃ নির্মাণ করেন। সেই সাথে ফিরিয়ে আনেন কোরিয়ার সমুজ্জ্বল ঐতিহ্যকে যা বার বার জাপান দ্বারা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

ঐতিহাসিক খিয়ংবোকখুং জানান দেয় জাপানের বর্বরতা ও কোরিয়ার অসহায়ত্বের এক করুণ ইতিহাস।

লেখকঃ ফাহাদ হোসেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত প্রবাসী