বাংলাদেশী এক প্রতারক। মাত্র দশ থেকে ১২ বছর সময়ের মধ্যে কোটিপতি হয়ে গেছেন। ২০০৫ সালে তিনি পা রাখেন স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায়। এরপর শুরু করেন জালিয়াতি। সঙ্গে নেন কয়েকজনকে। গড়ে তোলেন এক বিশাল প্রতারক চক্র।
তাদের কাছে ইউরোপ, সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ, কানাডা, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ভারত, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্ট, ওয়ার্ক পারমিট, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। মোটা টাকা বিনিময়ে তা বিক্রি করেন তারা। ইউরোপের একটি পাসপোর্ট তারা বিক্রি করে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলার। ফলে রাতারাতি দিন পাল্টে যায় ওই বাংলাদেশী ও তার সঙ্গে জড়িতদের। তিনি হয়ে ওঠেন কোটি কোটি টাকার মালিক। শুরু করেন বিলাসবহুল জীবন যাপন। অথচ ২০০৫ সালে তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে প্রথম মালয়েশিয়ায় যান।
এই প্রতারক চক্রের প্রধানকে আটক করেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ। তার বয়স ৫০ বছর। তবে তার নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। এ খবর দিয়েছে মালয়েশিয়ার অনলাইন দ্য স্টার। কর্তৃপক্ষ বলছে তারা বিশ্বাস করেন অবৈধ উপায়ে লাখ লাখ রিঙ্গিত অর্থ উপার্জন করেছেন ওই বাংলাদেশী। তার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্পর্ক আছে তার সিন্ডিকেটের। তারা ওইসব পাসপোর্ট ও ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট বিক্রি করে। সোমবার মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ একটি বিশেষ অভিযান চালায়। তাকে আলোচিত ওই বাংলাদেশীকে আটক করে তাদের জিম্মায় নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই অভিযানে শ্রী পেটালিং এবং আমপাং এলাকা থেকে ওই সিন্ডিকেটের ২৫ সদস্যকে এবং এই জালিয়াতি পরিচালনাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিবাসন বিষয়ক মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী বলেছেন, এ যাবত যত প্রতারক চক্রের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে, ধরা হয়েছে তার মধ্যে এই চক্রটি সবচেয়ে বৃহৎ। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল। তারা এমন যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের কাছে পাসপোর্ট বিক্রি করতো। যেসব বাংলাদেশী অন্য দেশে যেতে চান তাদের কাছে চড়া দামে তারা বিক্রি করে দিতো পাসপোর্ট। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে তারা একটি ইউরোপীয় পাসপোর্ট বিক্রি করতো ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলারের মধ্যে। সংবাদ সম্মেলনে মুস্তাফার আলী বলেন, যেসব দূতাবাসের সঙ্গে চক্রটির যোগাযোগ ছিল সেখানকার অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদেরকে জানিয়েছি আমরা কি তথ্য পেয়েছি।
তবে সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ, কানাডা, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ভারত, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের পাসপোর্ট এই চক্রটি কিভাবে পেয়েছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য নেই। মুস্তাফার আলী বলেন, আমরা এমন ঘটনাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছি। এটা একটি মারাত্মক অপরাধ। এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নেবো। তিনি বলেন, এই চক্রটি ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট বিক্রি করতো এক হাজার থেকে তিন হাজার রিঙ্গিত করে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, দু’বছরের বেশি সময় এসব কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল চক্রের মূল হোতা। মুস্তাফার আলী বলেন, পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট বিক্রি করে তিনি যে পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতেন তা আমরা হিসাব করে দেখেছি। এমন অর্থের পরিমাণ মিলিয়নস (রিঙ্গিত)। তবে মূল ওই হোতার একাউন্টে কি পরিমাণ অর্থ আছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান মুস্তাফার আলী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। তিনি আরো বলেছেন, তাদের অভিযানে এই চক্রটির কাছ থেকে বাংলাদেশী প্রায় ১০০ পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে নতুন সব ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা হয়েছে। এ জন্য তিনি বিশাল এক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। তার মধ্য দিয়ে বিদেশীদের কাছে তিনি পাসপোর্ট ও ওয়ার্ক পারমিট বিক্রির প্রস্তাব করতেন। তবে তার বেশির ভাগ খদ্দের ছিলেন নিজের দেশের মানুষ। তাই আমরা এই চেইনটাকে ভেঙে দিতে চাই। আমরা শুধু মূলহোতার পিছু নিয়েছি এমন নয়। একই সঙ্গে তার সাঙ্গপাঙ্গদেরকে ধরছি। মুস্তাফার আলী বলেছেন, তদন্তে তার অধীনে থাকা কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে নি।