stephenhawking_poriবিজ্ঞান সম্পর্কে যারা ন্যূনতম ধারণা রাখেন তাদেরকে যদি পদার্থবিজ্ঞানের কয়েকজন বিজ্ঞানীর নাম বলতে বলা হয় স্টিফেন হকিংয়ের নাম সে তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে। তার পুরো নাম স্টিফেন উইলিয়াম হকিং। তবে বিশ্ব তাকে হকিং নামেই চেনে। বিশ্বের সমকালীন তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের মধ্যে অন্যতম সেরা মনে করা হয় হকিংকে।

প্রবাদপ্রতিম এই বিজ্ঞানী ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। স্টিফেন হকিংয়ের বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন একজন জীববিজ্ঞানের গবেষক। তার বাবা চেয়েছিলেন হকিং বড় হয়ে চিকিত্সক হবে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার আগ্রহ ছিল বিজ্ঞানে আর গণিতে।

chardike-ad

ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল গণিতে কিন্তু অক্সফোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন পদার্থবিজ্ঞানের কসমোলজি বিষয়ে। এছাড়া কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেন পিএইচডি ডিগ্রি।

১৯৮৮ সালে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন হকিং। সারা বিশ্বে বইটির এক কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়।

ব্ল্যাক হোল, আপেক্ষিকতা ও মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি নিয়ে গবেষণা তাকে এনে দেয় বিশ্বখ্যাতি। স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু অসাধারণ সব গবেষণা করেছেন। কোয়ান্টাম জগতের অনিশ্চয়তা নীতিকে তিনি নিয়ে গেছেন কৃষ্ণবিবরের কাছে। আশ্চর্য হয়ে দেখান কৃষ্ণবিবর কালো নয়। ওখান থেকে বের হয়ে আসছে কণাস্রোত। ১৯৭৩ সালে তিনি কৃষ্ণবিবরের কণাস্রোতের কথা বলেন। এখন এ কণাস্রোতের নাম হকিং বিকিরণ।

ভুলে যাও কৃষ্ণবিবরের কথা। নারী হচ্ছে এই বিশ্বে সবচেয়ে রহস্যময়। এরকমই দাবি করেছিলেন মহাবিশ্ব গবেষক স্টিফেন হকিং। এই খ্যাতনামা পদার্থবিজ্ঞানী ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং দু’বার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল।

হকিং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক হিসেবে ২০০৯ সালে অবসর নেন। এ পদে মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনও ছিলেন এক সময়। এছাড়াও হকিং কেমব্রিজের গনভিলি এবং কেয়াস কলেজের ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৬৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে মরণব্যাধি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হোন হকিং। এই রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই রোগ ধরা পড়ার তিন থেকে চার বছরের মধ্যে মারা যান। তবে চিকিৎসকের ভবিষদ্বাণী আর সব অতীত ইতিহাসকে ভুল প্রমাণ করে ৭৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচলেন স্টিফেন হকিং।

হকিংয়ের কথা বলা ও চলাফেরার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল মোটর নিউরন ব্যাধি। যেহেতু হকিং কথা বলতে ও নড়াচড়া করতে পারতেন না, তাই তিনি কথা বলতেন ভয়েস সিনথেসাইজারের মাধ্যমে। তার মুখের পেশির নড়াচড়ার অনুযায়ী কথা বলতো যন্ত্র। এছাড়া গলার কম্পাংক ও চোখের পাতার নড়াচড়ার মাধ্যমে তিনি কম্পিউটারে লিখতে পারতেন।

প্রবাদপ্রতিম এই বিজ্ঞানীর জীবন নিয়ে ২০১৪ সালে ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’ নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়। ‘বিগ ব্যাং থিওরি’র প্রবক্তা স্টিফেন হকিং প্রিন্স অব অস্ট্রিয়ান্স পুরস্কার, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার, উলফ পুরস্কার, কোপলি পদক, এডিংটন পদক, হিউ পদক, আলবার্ট আইনস্টাইন পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

২০১৪ সালে বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে আত্মহত্যার চেষ্টার কথা জানিয়েছিলেন হকিং। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি তার শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচারের পর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমি একটু চেষ্টা করেছিলাম। তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবর্তীক্রিয়া অত্যধিক শক্তিশালী।’ আর সে কারণেই হকিং আত্মহত্যায় সে যাত্রায় সফল হতে পারেননি।’

বুধবার (১৪ মার্চ) কেমব্রিজে নিজ বাড়িতে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার এই দিকপাল ৭৬ বছর বয়সে মারা যান।