মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশের এএসআই আলম সরোয়ার্দি রুবেলের মাদক ব্যবসার পেছনের কথা বেরিয়ে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, নারীদের প্রতি লোভের কারণে তিনি এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। কারণ অর্থের বিনিময়ে নারীদের খুশি করতে অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের পথ খোঁজছিলেন তিনি। আর এই পথ হিসেবে মাদক ব্যবসাকে বেছে নেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এই এএসআই সুন্দরী কোনো নারীকে যেকোনো উপায়ে তার কবজায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এজন্য একজন সুন্দরী নারীর পেছনে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে কৃপণতা করতেন না তিনি। আর অসহায় কোনো সুন্দরী নারী তার চোখে পড়লে তাকে উপকার করাসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। একসময় নিজের কবজায় নিয়ে দৈহিক সম্পর্ক করতেন। মাদক ব্যবসা আর নারীর লোভে পুলিশের এই অফিসারের ভবিষ্যত এখন অন্ধকারে ধাবিত।
৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক এই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে মুন্সিগঞ্জের একটি সূত্র জানিয়েছে, এএসআই রুববেল প্রথম স্ত্রীকে রেখে মুন্সিগঞ্জের মাদক ব্যবসায়ী আবুলের মেয়েকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন তিনি। এই নারীর সঙ্গে প্রথমে অবৈধভাবে সম্পর্ক করতে ব্যর্থ হয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হন। তাকে ছাড়াও বেশ কয়েকজন নারী নিয়ে তার বন্ধুদের বাসায় গিয়ে ফুর্তি করতেন। তার এ অপকর্মের সহযোগিতা করতেন তারই লালনকৃত তিনজন সোর্স। আর আবুলের মেয়েকে বিয়ে করার পর দৃষ্টি পড়ে মুন্সিগঞ্জ পঞ্চসার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম আরিফ ওরফে বাবা আরিফের স্ত্রী সাবিনা আক্তার রুনুর দিকে। তার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তাকে রেখে সুমাইয়া নামে আরেক সুন্দরী নারীর সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি করে তোলেন। সুমাইয়ার সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পেরে রুনু রুবেলের কাছ থেকে সরে দাঁড়ান।
এরপর এএসআই রুবেল মুন্সিগঞ্জ হতে বন্দর থানায় বদলি হওয়ার পর সেখানে কয়েকজন সোর্স তৈরি করে মাদক ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ নিতেন কোন এলাকায় কার স্বামী বিদেশ এবং কোন মাদক ব্যবসায়ীর স্ত্রী সুন্দরী। বন্দর থানার মদনগঞ্জ এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আলী আকবরকে সুবিধা দেয়ার কথা বলে তার বাসায় মাদক ব্যবসায় একটি আস্তানা গড়ে তোলেন। সেখান থেকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ মাদক দিয়ে বিভিন্ন লোককে ব্লাকমেইলিং করতেন। আর আলী আকবরের মাধ্যমে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে ফুর্তি করতেন। এই ফুর্তি করাটা যেন তার একটি স্বভাবে পরিণন হয়।
এমন ধরণের বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে পরে তাকে বন্দর থানা হতে বদলি করে দেয়া হয়। পরে সিনিয়র অফিসারকে ম্যানেজ করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় যোগদান করেন। আর সদর থানায় এসে শহরের বিভিন্ন ফ্লাটে মাদক ব্যবসার আস্তানা করেন। কোথায় এবং কার ফ্লাটে আস্তানা করেছিলেন ডিবি পুলিশ তার অনুসন্ধানে নেমেছে।
এদিকে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মুন্সিগঞ্জ পঞ্চসার এলাকার মাদক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম আরিফ ওরফে বাবা আরিফের স্ত্রী সাবিনা আক্তার রুনুকে দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জ শহরে দেখতে পেয়ে নিজের কবজায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল এএসআই রুবেল। এমনকি তার বন্দরের ভাড়া করা ফ্লাটে নিয়ে দৈহিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এতে রুনু রাজি না হওয়ায় ইয়াবার চালান দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। তাতেও কোনো কাজে আসেনি। পরে কৌশলে তার ফ্লাটে নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে রুনুর বোন তাদের বাড়ি হতে স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে রুবেলের হাতে টাকা দিয়ে রুনুকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
কিন্তু রুনু রুবেলের সব অপকর্মের তথ্য পুলিশের ডিআইজিকে জানান। ডিআইজি বিষয়টি আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে জানান। পরে আইজিপি রুবেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। আর জেলা পুলিশ সেই সূত্র ধরে পৃথক অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এএসআই আলম সরোয়ার্দি রুবেলকে আটক করে এবং ৪৯ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। রুবেল এখন ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন।