কাজ হলো কার্গো সার্ভিস, ট্রাফিক বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গ্রাউন্ড সার্ভিস ও মোটর ট্রান্সপোর্ট বিভাগের। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যতদিন থাকবে, ততদিন এসব কাজও থাকবে। সেদিক বিবেচনায় এসব কাজের জন্য নিয়োজিতদের পদগুলোও স্থায়ী বলে মনে করেন বিমানের একাধিক কর্মকর্তা। কিন্তু এই স্থায়ী কাজের জন্য নৈমিত্তিকভিত্তিক অর্থাৎ অস্থায়ী লোক দিয়ে বছরের পর বছর কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোকসানের ভারে নুইয়ে পড়া বিমানকে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। সেসময় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয় প্রতিষ্ঠানটিতে।
তারও আগে ২০০৫ সালে বিমানের নৈমিত্তিকভিত্তিক লোক নিয়োগ সংক্রান্ত এক প্রশাসনিক আদেশের (২০০৩ সালের আদেশ) সংশোধনী জারি করা হয়। সেখানে বেতনক্রম-১ পদের অনুকূলে স্থায়ী কোনো কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়। এই পদের প্রয়োজনীয় লোকবল ঠিকাদারের মাধ্যমে ১০ দিন ও ৯০ দিন মেয়াদে নৈমিত্তিকভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় ওই আদেশে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে নৈমিত্তিকভিত্তিতে কর্মরত-কর্মচারীর নিয়মানুবর্তিতা, কর্মদক্ষতা এবং সততা ইত্যাদি বিবেচনাপূর্বক ৪-৫ দিন বিরতি দিয়ে একই ব্যক্তিকে পুনরায় ৯০ দিনের জন্য নিয়োগের বিধান রাখা হয়। একইসঙ্গে কাজ বা সময় শেষে তাদের ছাঁটাই করার নির্দেশ রাখা হয় ওই আদেশে।
বিমানের একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ওই আদেশ আবারও সংশোধন করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আরেকটি আদেশ জারি করেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। সেখানেও বেতনক্রম-১ এর পদের অনুকূলে স্থায়ী কোনো কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অথচ নিয়োগপ্রাপ্ত এসব নৈমিত্তিকভিত্তিক শ্রমিকদের বেশিরভাগই বিমানের কার্গো সার্ভিস, ট্রাফিক বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গ্রাউন্ড সার্ভিস, মোটর ট্রান্সপোর্ট বিভাগে কর্মরত। যে কাজগুলো বিমান যতদিন থাকবে ততদিন থাকবে বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এসব কাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্তদের পদগুলো স্থায়ী।
বিমানের ওই সূত্র জানায়, এসব পদ স্থায়ী হলেও বিমান বছরের পর বছর ধরে অস্থায়ী লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছে। যদিও ২০০৫ সালের আগে এসব পদে স্থায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হতো। সেসময় স্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে এখনও প্রায় ৫৭ জন কর্মরত রয়েছেন।
এ বিষয়ে বিমানের যৌথ দর-কষাকষি এজেন্ট বা সিবিএ’র এক নেতা বলেন, বিমান যতদিন থাকবে এসব পদে ততদিন লোক লাগবে। ২০০৭ সালের আগে বিমানের অর্গানোগ্রামে প্রায় ৭ হাজার লোকবল ছিলো। কিন্তু ২০০৭ সালের পরে তা একেবারে কমিয়ে ৩ হাজার ৪শ’ করা হয়। কিন্তু এতো কম লোক দিয়ে বিমানের কাজ সম্ভব নয়। এমনকি এই নিয়ম চালুর দিন থেকে একদিনের জন্যও বিমান ৩ হাজার ৪শ’ লোকবল দিয়ে চলতে পারেনি। এজন্য তারা একসময় অস্থায়ী ভিত্তিতে বহু লোক নিয়োগ দিয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য মতে, বিমানে নৈমিত্তিকভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই প্রায় ২৮-২৯ বছর যাবত এভাবে অস্থায়ীভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব শ্রমিক দিনে (৮ ঘণ্টা) ৪৯০ টাকা এবং ওভারটাইমের জন্য প্রতিঘণ্টায় ৬০ টাকা হারে মজুরি পান। তবে শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওভারটাইমে প্রতিঘণ্টায় ১২০ টাকা মজুরির জন্য একটি আদেশ দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে অস্থায়ীভিত্তিতে কর্মরত এসব শ্রমিক তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছে সিবিএ।
নৈমিত্তিকভিত্তিক শ্রমিকদের দাবি, স্থায়ী কর্মীদের মতো একই কাজ করেও সামান্য বেতন পান তারা। তাছাড়া কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পান না তারা। নেই অসুস্থতাজনিত ছুটি, সাধারণ ছুটি, জীবন বিমা বা পদোন্নতি।
এ বিষয়ে সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোন্তাছার রহমান বলেন, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ৭ মার্চ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষকে সময় দেওয়া আছে। ইতোমধ্যে তারা ওভারটাইম মজুরি দ্বিগুণ ও নতুন অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ বন্ধের দাবি দু’টি মেনে নিয়েছে। তবে নির্ধারিত চাকরি স্থায়ী না হলে মার্চ মাসের পর আবারও আন্দোলন শুরু হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, কোনো আল্টিমেটাম দিয়ে এলে আইনিভাবে কোনো লাভ নেই। তবে দায়িত্বরত টিম তাদের বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু একসঙ্গে এতো মানুষ স্থায়ী করা সম্ভব নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিমানের নতুন সেটআপ হচ্ছে। সেখানে লোকবল বাড়ানো, স্থায়ীভাবে নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলানিউজ এর সৌজন্যে