এন হক (ছন্দ নাম) ১০ বছর ধরে সরকারি একটি কম্পানিতে কাজ করছেন। পরিবার ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ১০ বছর ধরেই আমিরাতে । হঠাৎ করে গত বছর তার চাকরি চলে যায়। ভিসা নেই কাজও নেই। দেশে গিয়েও কিছু করার সামর্থ্য তেমন নেই। এখানে অনেক ধার কর্জ করে নিজের নামে লাইসেন্স করে চড়া মূল্যে ইনভেস্টরের ভিসা লাগিয়েছে। কিন্তু ভিসা বন্ধ থাকার দরুন নিজের লাইসেন্স করা কম্পানিতে লোকজন না আনতে পেরে লোকসানের পাশাপাশি পরিবার ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এন ছাপা (ছন্দ নাম) দীর্ঘ ২০ বছরের প্রবাস জীবনে বিগত ১১ বছর ধরে একটি নাম করা কম্পানি চাকরি করে আসছেন। নিজের পরিবার নিয়ে থাকতেন আমিরাতে। হঠাৎ করে গত বছর তার চাকরি চলে যায়। নতুন ভিসা নেই, ভিসা পরিবর্তনের সুযোগও নেই। তাই নতুন কাজ পেয়েও ভিসার জন্য তাকে দেশে চলে যেতে হলো। দেশে গিয়ে তাকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন প্রবাসে অভ্যস্ত হয়ে দেশে কিছু করাও তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ডি আলম (ছন্দ নাম) ৯ বছর ধরে আবুধাবিতে একটি নাম করা কম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি করতেন। ছেলেমেয়েরা এখানকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়তো। বেশ ভালোই চলছিল সব কিছু। কিন্তু হঠাৎ করে গত বছর তার চাকরি চলে গেলে পরিবার ও ছেলেমেয়েদের দেশে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে এখানে ছোটখাট ব্যবসা দাঁড় করিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভিসা বন্ধ থাকায় তার ব্যবসার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে খেতে বন্ধ করার উপক্রম। অপরদিকে দেশে তার ছেলেমেয়েরা দেশের শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এস মিয়া, এন হক, এন ছাপা ও ডি আলমের মতো হাজার হাজার প্রবাসী সংযুক্ত আরব আমিরাতে নতুন ভিসা বা ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় নানা ভোগান্তিতে রয়েছেন কয়েক বছর ধরে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রম বাজার ও দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটিতে বিগত পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য নতুন কোনো ভিসা হচ্ছে না বা নতুন কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে যেতে পারছেন না। এমন কি যারা দেশটিতে রয়েছেন বা কাজ করছেন এমন প্রবাসী শ্রমিকদের ভিসা রিলিজ বা ট্রান্সফারেরও কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানে দেশটিতে প্রায় আট লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মরত। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী যারা যে কম্পানিতে আছেন তারা একই কম্পানিতে কাজ করে যাচ্ছেন। যদি কেউ চাকরি হারান তাহলে দেশে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। যদিও বা বিপুল পরিমাণে টাকা খরচ করে ইনভেস্টরের ভিসা লাগানোর একটা পথ রয়েছে।
এমতাবস্থায় নতুন ভিসা চালু না হলেও অন্তত ট্রান্সফার বা ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ করা গেলে হাজার হাজার প্রবাসী উপকৃত হবে।