আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে সময় কাটছিল এলাকাবাসীর- কখন এসে হুজুর নামবেন। একপর্যায়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো হাজারো মানুষের। দূর থেকে শোনা গেল হেলিকপ্টারের আওয়াজ।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশে দৃশ্যমান হলো হেলিকপ্টার। দর্শকদের মধ্যে চাঞ্চল্য বেড়ে যায়। জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া মাঠে অতবরণ করলেন হুজুর।
দুই পাশে সশস্ত্র বডিগার্ডরা আছেন। আছেন পুলিশও। কিন্তু পুলিশ-গার্ডদের টপকে ইতোমধ্যে মোবাইল নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তরুণরা। হুজুরের সঙ্গে সেলফি ওঠাচ্ছে তারা। সেলফি পর্ব শেষে আয়োজকদের অভ্যর্থনায় বিশ্রামে যান অতিথি।
রোববার বিকেলে নাটোরের সিংড়ার শালমারা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে এ দৃশ্য দেখা যায়। ওই হুজুরের নাম এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী জৈনপুরী। ভক্তরা চেনেন পীরে কেবলা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী জৈনপুরী হিসেবে। তিনি শালমারা দাখিল মাদরাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে ‘প্রধান বক্তা’ হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন।
প্রত্যন্ত গ্রামে ওয়াজ মাহফিলের এক অতিথিকে ঘিরে এমন এলাহি কাণ্ডের ছবি সামাজিক মাধ্যমে আসার পর নানা আলোচনা হচ্ছে। ওয়াজে যাওয়ার ক্ষেত্রে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর হেলিকপ্টার-প্রীতি সম্পর্কে অবগত অনেকে তাকে ‘হেলিকপ্টার হুজুর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এছাড়া সিংড়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার বিনিময়ে এনায়তুল্লাহ আব্বাসী মোটা অঙ্কের টাকা ‘হাদিয়া’ নিয়েছেন তা স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হয়েছে। এক ঘণ্টায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন এ হেলিকপ্টার হুজুর।
হেলিকপ্টার থেকে নামার পর আব্বাসীকে অভ্যর্থনা জানাতে যান শালমারা দাখিল মাদরাসা সুপার শহিদুল ইসলাম, সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ জলসা কমিটির লোকজন।
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মাদরাসায় বার্ষিক জলসা (ওয়াজ মাহফিল) অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার জনগণের মাঝে সাড়া তুলতেই পীরে কেবলা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী জৈনপুরী হুজুরকে এক লাখ টাকার মাধ্যমে প্রধান বক্তা হিসেবে আনা হয়। এছাড়া হেলিকপ্টার ভাড়া বাবদ আরও ৮০ হাজার টাকার টাকা তাকে দেয়া হয়েছে।
একই মাহফিলে অন্য চার বক্তাকে যথাক্রমে ২০ হাজার, ১০ হাজার, এবং ৫ হাজার টাকা করে (দুইজনকে) দেয়া হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন হেলিকপ্টার হুজুর। এ ঘণ্টার ওয়াজের জন্য তাকে দেয়া হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা।
যেখানে একই মাদরাসার বেশিরভাগ শিক্ষক পুরো মাসের পরিশ্রমের জন্য ১৫ হাজার টাকারও কম বেতন পান, সেখানে এক ঘণ্টার জন্য এত টাকা দিয়ে বক্তা আনার কারণ কী- এমন প্রশ্নে মাদরাসার সুপার জানান, মাদরাসা কমিটির সবার সিদ্ধান্তে এটা করা হয়েছে। মাদরাসার নিজস্ব পুকুরের মাছ বিক্রিসহ বিভিন্ন খাতের আয়ের টাকা থেকে বক্তাদের ‘হাদিয়া’ দেয়া হয়েছে।
সোমবার এ বিষয়ে জানতে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী জৈনপুরীর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গতকাল রোববার ওয়াজ মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের জৈনপুরী বলেন, সময়ের অপচয় রোধ করতে হেলিকপ্টারে যাতায়াত করি। এর খরচ মাহফিলের আয়োজকরা বহন করেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়মিত ওয়াজ মাহফিলে অংশ নেয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার প্রায় ২০টি দেশে একই উদ্দেশ্যে সফর করেছেন বলেও জানান তিনি।
সিংড়া থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) নেয়ামুল আলম জানান, জলসা কমিটি নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ চেয়েছিল। তাই জৈনপুরী পীরের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পাঠানো হয়।
সৌজন্যে- যমুনা টিভি