Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

Asam peopleনতুন বছরের প্রথম প্রহরে ভারতের আসাম রাজ্য সরকার ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের একটি ‘বৈধ নাগরিক’ তালিকা প্রকাশ করে। যে তালিকা থেকে বাদ পড়েন প্রায় দেড় কোটি বাসিন্দা। যারা বাদ পড়েছেন তাদের সিংহভাগই মুসলিম। ফলে তালিকা থেকে বাদ পড়া বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে রাজ্যের তালিকায় যাদের নাম নেই, তাদের রাজ্য থেকে বিতাড়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে আসাম। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।

chardike-ad

গার্ডিয়ানের ভারতীয় প্রতিনিধি থেকে মিখায়েল সাফীর পাঠানো প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের নতুন বর্ষের প্রথম প্রহরে আসাম রাজ্য সরকারের প্রকাশিত ‘বৈধ’ নাগরিকের তালিকায় এক কোটি ৯০ লাখ নাম ছিল।যেখানে এক কোটি ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম বাদ পড়ে। আর এ তালিকা প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হানিফ খান নামে একজন ট্যাক্সিচালকের লাশ পায় পুলিশ। কাছাড় জেলার বাসিন্দা ছিলেন হানিফ। তার স্ত্রী রুশকার দাবি, ‘আমি নিশ্চিত, তালিকায় নিজের নাম না থাকায় ও আত্মহত্যা করেছে।’ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা দু’বছর ধরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল ভারতীয় মা ও আফগান বাবার সন্তান হানিফকে।

দু’বছর আগে, আসাম সরকার ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পূর্ববর্তী সময় থেকে এ রাজ্যে বসবাসকারী হিসেবে যারা নিজেদের শেকড় প্রমাণ করতে পারবে, তাদের চিহ্নিত করে অন্য অধিবাসীদের বিতাড়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিল। ৩১ ডিসেম্বর রাতে প্রকাশিত তালিকাটিকে বলা হচ্ছে ‘অসম্পূর্ণ’। এরই মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি আসছে যে, গোটা ভারতজুড়েই লাখো মানুষের তালিকা করা হচ্ছে ‘রাষ্ট্রবিহীন’ পরিচয়ে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করছে যে, দেশটিতে প্রায় দেড় কোটি বাঙালি বা বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে কর্মরত আছে।

এদিকে আসামে এখন নতুন করে একটি আশ্রয়কেন্দ্র বানানো হচ্ছে- যেখানে বের করে দেয়ার আগ পর্যন্ত তথাকথিত বিদেশিদের রাখা হবে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এ রকম আরো ছয়টি কেন্দ্রে ইতোমধ্যে কমপক্ষে দু’হাজার লোককে আটক রাখা হয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকেই আসামে ‘অভিবাসীবিরোধী আন্দোলন’ চলছে। তারই জেরে কয়েকটি মুসলিম-অধ্যুষিত গ্রামে শুধু এক দিনে একযোগে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এবং টানা সাত ঘণ্টায় কমপক্ষে এক হাজার ৮০০ মানুষকে হত্যা করা হয়।

নির্যাতিতদের পক্ষে কাজ করা আইনজীবী আমান ওয়াদুদ বলছেন, ‘বিদেশি বলে আখ্যায়িত করে এদের সাথে এমন আচরণ করা হচ্ছে- যেন এরা ভিনগ্রহের মানুষ।’ ‘বিদেশি’ বলে অভিযোগে আচমকা গ্রেফতার হওয়া এবং ডিটেনশন ক্যাম্পে পচে মরার আশঙ্কায় আসামের অধিবাসী বাঙালি মুসলিমরা নিদারুণ উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আমান ওয়াদুদ।

৩১ ডিসেম্বরের তালিকাটিকে বলা হচ্ছে ‘অসস্পূর্ণ’; আগামী ৩১ মে সরকার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে এবং তখন বহিষ্কারের হুমকিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়বে লাখের হিসাবে। এদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয়।

তবে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বলেছেন, ‘ওরা সাংবিধানিক অধিকার হারাবে; একটিমাত্র অধিকার ওদের থাকবে- জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার- অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়।