শ্রীলঙ্কার ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত নিদাহাস ট্রফিতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে স্বাগতিকরা ছাড়াও বাংলাদেশ এবং ভারত। শক্তির বিচারে নিঃসন্দেহে ভারতই এগিয়ে। সাম্প্রতিক ব্যস্ত সূচির কারণে শোনা যাচ্ছে, নিদাহাস ট্রফিতে বিরাট কোহলিসহ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার খেলবেন না। তাদেরকে বিশ্রাম দেয়া হতে পারে। দ্বিতীয় সারির একটি দলই হয়তো শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটি খেলতে পাঠাবে ভারত। তবুও, সেই দলটিই হবে এই টুর্নামেন্টের শক্তিশালী দল। তারাই হবে সবচেয়ে ফেবারিট।
বাকি থাকল দুটি দল। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে যেভাবে স্বাগতিক টাইগারদের তুলোধুনো করে দিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা, তাতে নিদাহাস ট্রফিতে ভারতের পরই শক্তিশালী দল হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে নাম থাকার কথা শ্রীলঙ্কার; কিন্তু তা না, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এবং বর্তমানে ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জেরেকরের মন্তব্য, ভারতের পরই নাকি নিদাহাস ট্রফিতে শক্তিশালী দল হচ্ছে বাংলাদেশ।
তবে, সঞ্জয় মাঞ্জেরেকরের মতে, নিদাহাস ট্রফিটা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক অজ্ঞনে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে এই টুর্নামেন্টটা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সুযোগ। তিনি মনে করেন, এই টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার চেয়েও শক্তিশালী দল হচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, মাঞ্জেরেকর চান- নিদাহাস ট্রফিতেই বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে ফিরে আসুক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ায় লেখা এক কলামে সঞ্জয় মাঞ্জেরেকর বলেন, ‘নিদাহাস ট্রফি বাংলাদেশকে আরও একটি দারুণ সুযোগ তৈরি করে দিতে যাচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক অজ্ঞনে নিজেদের আরও একবার প্রমাণ করার। বিশেষ করে ভারতের মত বিশাল ক্রিকেট অনুসরণকারী জাতির সামনে নিজেদের তুলে ধরার। আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশ খুব ধীরগতিতেই এগিয়েছে। তবে এ কারণে তাদের শারীরিক, মানসিক শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছে। ফিটনেসের উন্নতি হয়েছে। এবং একই সঙ্গে অবশ্যই খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসের দারুণ বৃদ্ধি ঘটেছে।’
ভারতের সাবেক এই ব্যাটসম্যান আরও লিখেছেন যে, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে নিজেদের প্রমাণ করার এখনও অনেক দুর বাকি। তবে তাদেরকে ভারতের উদাহরণ অনুসরণ করার পরামর্শ দেন মাঞ্জেরেকর। তিনি লিখেন, ‘বিদেশের মাটিতে নিজেদের প্রমাণ করার এখনও অনেক দুর বাকি। এমনকি এই এক ইস্যুতে ভারতের সঙ্গেও কোনো পার্থক্য নেই। তবে, এই ত্রিদেশীয় সিরিজে আমি মনে করি বাংলাদেশই ভারতের পর সবচেয়ে শক্তিশালী দল। এই দলটিতে রয়েছে সাকিব আল হাসান এবং মোস্তাফিজুর রহমানের মত বিশ্বমানের দু’জন ক্রিকেটার। তারা হলেন গেম চেঞ্জারস। আরও একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি তামিম ইকবাল। নিজের দিনে যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারেন এই ব্যাটসম্যান।’
গত মাসেই ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুতে দারুণ খেলছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়ে দু’দলকেই হারিয়েছে তারা; কিন্তু ফাইনালে এসে আবার হারতে হয় শ্রীলঙ্কার কাছে। মাঞ্জেরেকর মনে করেন, এটা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কারণ, দেশটিতে ক্রিকেট প্রচুর জনপ্রিয়। মানুষের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা আছে। যে কারণে অন্য সব সমস্যার সমাধান আপনাতেই হয়ে যাবে। এবং এটাই ক্রিকেটে বাংলাদেশকে অনেক দুর নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
মাঞ্জেরেকর লিখেন, ‘বাংলাদেশের উত্থান সত্যি ক্রিকেটের জন্য একটা ভালো খবর। দেশটিতে ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয়। এতটাই জনপ্রিয় যে, ভারতের চেয়েও বেশি। যেমনটা কয়েক বছর আগেও ভারতে ছিল। বাংলাদেশ এখন কেবলই মাত্র একটি মাত্র খেলার দেশ। সেটা হচ্ছে ক্রিকেট। তাদের খেলোয়াড়রা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় তারকা। ঢাকায় গেলে আপনি দেখতে পাবেন, ক্রিকেটাররাই বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন নিয়ে হাজির হচ্ছে বিশাল বিশাল বিলবোর্ডগুলোতে।’
এখানেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন মাঞ্জেরেকর। তিনি বলেন, ‘এই আবেগ এবং ক্রিকেটের প্রতি এই ভালবাসাই দেশটির তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ভালোমানের কোনো একাডেমি ছাড়াও প্রচুর ক্রিকেটার তৈরি হচ্ছে।’
ক্রিকেটের এত জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হিসেবে মাঞ্জেরেকর চিহ্নিত করেছেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্যতাকে। তিনি বলেন, ‘এর কারণ হচ্ছে, দেশটির বিশাল অংশই দারিদ্র্য পিড়িত। এ কারণেই লক্ষ লক্ষ শিশু-কিশোল ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার স্বপ্ন দেখে। এটা শুধুমাত্র এই জন্য যে, একদিন তারা তারকাখ্যাতি লাভ করবে এবং অনেক অর্থ আয় করবে- এই আশায়। যেমনটা হয়েছে তাদের আইডল সাকিব এবং মোস্তাফিজ।’
সঞ্জয় মাঞ্জেরেকর চান টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের নেতৃত্বে আবারও ফিরে আসুন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ঠিক এক বছর আগে এই ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মাশরাফি। তার পরিবর্তে অধিনায়ক করা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কাছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভরাডুবি ঘটার কারণে আবারও মাশরাফিকে ফেরানোর আলোচনা তুঙ্গে উঠে গেছে। এমনকি বিসিবি থেকেও চেষ্টা করা হচ্ছে, মাশরাফিকে টি-টোয়েন্টিতে ফিরিয়ে আনার। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়ে দিয়েছেন, মাশরাফি যদি ফিরে আসেন, তাহলে তারা এটাকে স্বাগত জানাবেন।
মাঞ্জেরেকর বলেন, ‘আমি আশা করি, মাশরাফি বিন মর্তুজা আবারও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বে ফিরে আসবেন। তিনি বিস্ময়কর একজন ট্যাকটিসিয়ান। ভালো নেতৃত্ব সব সময়ই একটি উদীয়মান দলকে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে দারুণ ভুমিকা রাখে। বিশেষ করে, সেই দলটি যখন বিশ্বের সেরা একটি দলে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখে।’
সূত্র- জাগো নিউজ