গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাবের সঙ্গে এল-নিনোর দাপটে বাংলাদেশে চলতি বছরটি উষ্ণতম বছর হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এক মাস আগেই ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে হাড় কাপানো শীত বয়ে গেছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। সামনে আসছে অসহনীয় তাতানো গরমের সময়।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বলছে, গত দশ মাসে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা দীর্ঘমেয়াদী গড়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা কোনো নিশ্চল অবস্থায় নেই। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। যা ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ঘটছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরের এল নিনোর প্রভাবে জলতলের তামপাত্রাও বেড়ে গেছে। ফলে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগারে জলীয় বাষ্পের জোগানে টান পড়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ফেব্রুয়ারি-থেকে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছেন, এপ্রিল মাসে তীব্র তাপপ্রবাহ, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আর কালবৈশাখী ও বজ্রঝড়ের দাপট থাকবে। এপ্রিল মাসটি বাংলাদেশের জন্য এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময় হয়ে আসছে। তাপমাত্রার তীব্রতা এপ্রিলে চরমভাবাপন্ন থাকতে পারে, বিশেষ করে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। ওই অঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে যার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র দু-এক দিন মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইতে পারে যার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁইতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের ফলে জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের ওপর বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে এল-নিনোর প্রভাবে পুড়েছে পুরো উপমহাদেশ, সেটা চলে ২০১৬ সালের জুন-জুলাই পর্যন্ত। এর পর থেকে প্রতি বছরই প্রকৃতির বিরূপ আচরণের মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গত বছরও দেশ দেখেছে প্রকৃতির বৈরী আচরণ। রেকর্ড হয়েছে ৩৫ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের। এ রকমই বৈরী আচরণের দেখা মিলতে পারে আগামী এপ্রিল মাসে। তবে মার্চ জুড়ে প্রকৃতির আচরণ স্বাভাবিক থাকবে পূর্বাভাস বলা হয়েছে। তারপার থেকেই তাপমাত্রা অসহনীয় হতে থাকবে। মার্চের শেষ থেকে এপ্রিল মধ্যভাগ জুড়েই তীব্র কালবৈশাখী এবং তীব্র বজ্রঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসেই বঙ্গোপসাগরে দু-একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার একটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত দুই-তিন দিন বজ্রসহ মাঝারি অথবা তীব্র কালবৈশাখী বইতে পারে। দেশের অন্যত্র চার-পাঁচ দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ এপ্রসঙ্গে বলেন, আবহাওয়ার তারতম্য ঘটছে। নিয়ম মানছে প্রকৃতি। উষ্ণতার হার ব্যপকভাবে বাড়ছে। আবার শীতও তীব্র হচ্ছে। এবছর তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাসটা সত্যিই দুশ্চিন্তার কারণ।
সৌজন্যে- যুগান্তর