Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চট্টগ্রামের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। কোরিয়া-চীন-বাংলাদেশ (কেসিবি) নামের সার্ভিসটি দেশে প্রথম চালু করছে কোরিয়ান শিপিং কম্পানি ‘হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন’। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথম জাহাজটি দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবে। মাঝপথে সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের কেউশিয়াং এবং চীনের সাংহাই বন্দরকে সংযুক্ত করবে। নতুন সার্ভিসের ফলে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের পরিবর্তে সরাসরি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। গার্মেন্টশিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিপুল সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে।

chardike-ad

সরাসরি জাহাজ চালুর ফলে কোরিয়া থেকে চট্টগ্রাম আসতে লাগবে মাত্র ১৪ দিন। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহন খরচও ৩০ শতাংশ সাশ্রয় হবে। এরই মধ্যে নতুন সার্ভিসের প্রথম জাহাজে ফুল বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ‘হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন’-এর দেশীয় শিপিং এজেন্ট কনটিনেন্টাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী।

শিপিং সার্ভিস চালুর উদ্যোক্তারা জানান, কোরিয়া-চীন-বাংলাদেশ (কেসিবি) নামের সার্ভিসে প্রতি সপ্তাহে দুটি কনটেইনার জাহাজ চলবে। পরবর্তী সময়ে এই রুটে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা পাঁচটিতে উন্নীত হবে। নতুন সার্ভিসটি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর-সিঙ্গাপুর বন্দর-তাইওয়ানের কেউশিয়াং-কোরিয়ার ভুসান বন্দরে পৌঁছবে। আর ফিরতি পথে চীনের নিমবো-সাংহাই বন্দর হয়ে সিঙ্গাপুর বন্দর হয়ে আবারও চট্টগ্রাম বন্দর আসবে।

আসা-যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুর বন্দর যুক্ত করার কারণ হিসেবে আহসান ইকবাল বলছেন, দুই পথেই সিঙ্গাপুর বন্দরের সামনে দিয়েই যেতে হবে, সেই সুযোগকে কাজে লাগানো হয়েছে। সেখানে জাহাজে স্থান খালি থাকলেই শুধু সুযোগটি নেওয়া হবে।

সার্ভিসটির সুফল নিয়ে দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি কোনো জাহাজ সার্ভিস চালু নেই। তাই অনেক আগে থেকেই কোরিয়া থেকে এইচ আর কয়েল ও জিংক আমদানি করছি খোলা জাহাজেই।’

কোরিয়ার অনারারি কনসাল মোহাম্মদ মহসিন বলছেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু হলে ট্রানজিট পোর্টগুলোতে পণ্য নামাতে হবে না। আরেকটি জাহাজে তোলার ঝামেলাও নেই। এতে করে অবশ্যই ভাড়া ও সময় অনেক কম লাগবে। দেশের অর্থনীতিতে এটি বিশাল বড় অবদান রাখবে।

শিপিং ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে কোরিয়া কিংবা তাইওয়ানের সরাসরি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু নেই। চীন ও কোরিয়া থেকে প্রচুর গার্মেন্ট মেশিনারিজ ও কাঁচামাল দেশে আসে। এসব পণ্য প্রথমে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে নামে, সেখান থেকে আরেকটি জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে; কিন্তু সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে এখন এসব পণ্য চট্টগ্রামমুখী জাহাজে তোলার আগে অন্তত ৩০ দিন বন্দরে পড়ে থাকছে। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ গার্মেন্ট পণ্য উত্পাদনে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থাকছে, এর ব্যতিক্রম হলে বিপুল খরচ করে বিমানে পাঠাতে হয় অথবা নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে হয় দাম কমিয়ে দেয় অথবা অর্ডার বাতিল করে দেয়।

বিজিএমইএ সাবেক সহসভাপতি ও এশিয়ান অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা কোরিয়া থেকে আসা বেশির ভাগ পণ্য শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে আনতে হচ্ছে। নতুন এই সার্ভিস অবশ্যই বড় ধরনের সুফল মিলবে। কারণ এতে চার থেকে পাঁচ দিন লিড টাইম (পণ্য অর্ডার থেকে শুরু করে ক্রেতার গুদামে পৌঁছানো পর্যন্ত সময়) পণ্য কমে যাবে। আর সাশ্রয় হওয়া এই সময় আমরা পণ্য উত্পাদনে কাজে লাগতে পারব।’

জানা গেছে, চীন থেকে চট্টগ্রামে কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু রয়েছে দুটি বিদেশি শিপিং কম্পানির। একটি প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইনের (পিআইএল) চিটাগাং চায়না সার্ভিস এবং এমসিসি লাইনের সাংহাই সার্ভিস। তারা কী ভাবছে জানতে চাইলে পিআইএল বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ জহীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন সার্ভিসকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা নেই। আমরা চীন থেকে এলেও বন্দর ভিন্ন।’

জানা গেছে, নতুন সার্ভিস ঘিরে বড় স্বপ্ন দেখছেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। ইয়াংওয়ান গ্রুপসহ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে। কোরিয়ার আরো বিখ্যাত কম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে তৈরি বেশ কিছু পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ডিউটি ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি করেছে ২৩৮ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে আমদানি করেছে এক হাজার ২৬৮ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য। দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও তাইওয়ানের কিউশিয়াং বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে প্রবেশ অনেক বেশি সহজ হবে।

কালের কন্ঠের সৌজন্যে।