বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পাঁচ দেশের অন্তত ৪৩ ব্যক্তি ও ৫ প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সন্দেহের তালিকায় আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ শাখায় কর্মরত অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তা ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি। সিআইডির বরাত দিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইনডিপেনডেন্ট টিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সিআইডি বলছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কোনে না কোনেভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ শাখার অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তা জড়িত। বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও আছেন সন্দেহের তালিকায়। তিনি চুরির সময় সুইফট এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ছিলেন।
সন্দেহের তালিকায় আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব ও বাজেট শাখার একজন যুগ্ম পরিচালক, দুইজন উপ-পরিচালক, ১ জন উপ-মহাব্যবস্থাপক, পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের ১ জন উপ-মহাব্যবস্থাপক, দুইজন যুগ্ম পরিচালক ও দু’জন উপ-পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
এছাড়া আইটি শাখার ১ জন উপ-মহাব্যবস্থাপক, এফএসএসএস পিডি বিভাগের একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক ও ফরেক্স শাখার একজন উপ-পরিচালক আছেন সন্দেহের তালিকায়।
সিআইডি বলছে, ফরেক্স শাখার সন্দেহভাজন ওই কর্মকর্তার কক্ষেই হ্যাকাররা প্রথম আক্রমণ চালায়। সন্দেহভাজন কর্মকর্তারা হ্যাকারদের সুযোগ করে দিতে কাজ করেছে।
সিআইডি বলছে, ভারতীয় একটি কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটের সঙ্গে আরটিজিএস কানেকশন দেওয়ার পরই রিজার্ভ চুরির সুযোগ তৈরি হয় বলেও প্রামাণ মিলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটের সাথে আরটিজিএস কানেকশন দেওয়ার কাজ দিতে ভারতীয় নাগরিক এডি হাদ্দাদকে সহায়তা করেছিলেন নির্বাহী পরিচালক পদমর্যার এক কর্মকর্তা। আরটিজিএস কানেকশন দেওয়ার পরই সুইফটের নিরাপত্তা দূর্বল হয়ে পড়ে।
তখন থেকেই চুরির পরিকল্পনা করে চক্রটি। আর হ্যাক হওয়ার কথা জেনেও এডি হাদ্দাদ ও বাংলাদেশ সুইফট এসোসিয়েশনের তৎকালীন এক নেতা গভর্ণরকে সুইফট খোলা রাখতে চাপ দিয়েছেন।
সিআইডি মনে করছে, এই তিনজন রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরাসরি জড়িত। এদের আইনের আওতায় আনতে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তারা।
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ফিলিপাইনের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি রিজার্ভ চুরিতে জড়িত। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে আরসিবিসি ব্যাংক, ফিল্ডরেম মানি এক্সচেঞ্জ, বিকন কারেন্সী, ক্যাসিনো সোলেয়ার ও ইষ্টার্ণ হাওয়াই। ফিলিপাইন, চায়না, শ্রীলঙ্কা, জাপান ও ভারতের অন্তত ৪৩ ব্যক্তি রিজার্ভ চুরিতে জড়িত।
সন্দেহের শীর্ষে সুইফটের প্রেসিডেন্ট এডি হাদ্দাদ, কর্মকর্তা নীলা ভান্নান, আর্থেস সুদিন্দ্র, প্রিতম রেড্ডি, অভিজিত কুমার সাহা, রবি সুভ্রানিয়াম ও সৌরভ কুমার। এডি হাদ্দাদের পরিকল্পনায় ৫ জন হ্যাকিংয়ে জড়িত হয়।
চীনের নাগরিক গাওসুয়া, ডিংজে, শ্রীলংকার শালিকা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শালিকা প্যারেরাসহ ৫ পরিচালক, জাপানের গাড়ি ব্যবসায়ী সাসাকি ও তার পর্বপরিচিত জয়দেবা রিজার্ভ চুরিতে সরাসরি জড়িত সন্দেহ
আর ভূয়া নাম ঠিকানায় একাউন্ট খুলতে সহায়তা করে আরসিবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান লরেন্স তান তৎকালীন ম্যানেজার মায়া দিগুতিসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
উল্লেখ, ২০১৬ সালে চার ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে চুরি হয় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। টাকায় ৮০৮ কোটি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থ জমা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে। এই চুরির ঘটনায় মামলা হলে তদন্তে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগটি। সিআইডি জানিয়েছে রিজার্ভ চুরির মামলাটির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দিতে আরো সময় লাগবে।