গত মাসে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস অভিবাসনব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা আইনের একটি খসড়া প্রকাশ করেছে। এর চুম্বক দিক মোটামুটি সবারই আগে থেকে জানা। সেগুলো হলো সমর্থকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আড়াই হাজার কোটি ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া এবং ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস অ্যাক্টের (ডাকা) আওতায় থাকা শিশুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ খুঁজে বের করা। যাদের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু মা-বাবা অবৈধ নাগরিক; সেই সব শিশু ডাকা আইনের সুবিধা পেয়ে থাকে। এখন নতুন আইনের খসড়া পাসের ওপর নির্ভর করছে তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে, নাকি মা-বাবার সঙ্গে তাদেরও বিতাড়িত হতে হবে। হোয়াইট হাউসের ওই খসড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এতে ‘পারিবারিক পুনর্মিলন’ ভিসা এবং ডিভি লটারি ভিসা ব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলার চেষ্টা রয়েছে। বিদ্যমান আইনে ‘পারিবারিক পুনর্মিলন’ ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়া অভিবাসীরা স্বদেশ থেকে স্ত্রী, মা-বাবা ও ভাইবোনকে আমেরিকায় নিয়ে আসতে পারেন।
এই খসড়া আইনসভায় অনুমোদনের জন্য শিগগিরই পাঠানো হবে। এটি পরিবর্তন ছাড়াই যদি পাস হয়ে যায়, তাহলে অভিবাসন পদ্ধতির খোলনলচে বদলে যাবে। অভিবাসীরা বড় ধরনের হয়রানির মুখে পড়বেন। যাঁরা এই হয়রানি এড়াতে চান, তাঁদের উচিত হবে দেরি না করে এখনই আবেদন করাসহ অভিবাসনসংক্রান্ত যাবতীয় প্রাথমিক কাজ শেষ করা।
পারিবারিক অভিবাসন ক্যাটাগরি বিষয়ে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন থাকছে এই খসড়ায়। ‘ফ্যামিলি রি-ইউনিফিকেশন’ ভিসা কোটায় শুধু স্বামী-স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের আনা যাবে-খসড়ার এই দিকটি নিয়ে এমনকি ডেমোক্র্যাটরাও আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু এই ক্যাটাগরির ভিসায় অন্য কতকগুলো সীমাবদ্ধতাকে তাঁরাও যে সমর্থন দেবেন, তা প্রায় নিশ্চিত। এর কারণ হলো, ২০১৮ সালে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ডেমোক্র্যাটরা শ্বেতাঙ্গ কর্মজীবী শ্রেণিকে খুশি করতে চাইবেন। এই শ্বেতাঙ্গরা সব সময়ই ‘চেইন মাইগ্রেশন’-এর মাধ্যমে সব ধরনের অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়ার বিরোধিতা করে থাকেন। এতে তাঁদের কর্মসংস্থানে টান পড়ে। খসড়ায় এই ‘চেইন মাইগ্রেশন’ সীমিত করে আনা হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটরা এই বিষয়ে আপত্তি তুলবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় যেসব অভিবাসী নিজ দেশে থাকা মা-বাবা ও ভাইবোনকে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের কাছে আনতে চান, তাঁরা বড় ধরনের বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। খসড়াটি আইন হিসেবে স্বীকৃত হলে তাঁরা আর স্বামী-স্ত্রী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তান ছাড়া কাউকে আনতে পারবেন না। তবে তাঁরা যদি অনতিবিলম্বে তাঁদের মা-বাবা ও ভাইবোনদের আনার জন্য আবেদন করেন, তাহলে একটা আশার দিক আছে। খসড়া বিল পাসের এক দিন আগেও যদি তাঁরা আবেদন করেন, তাহলে তাঁদের বিষয়টি আগের আইনে বিবেচনা করা হবে।
খসড়াটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার অংশটি এইচ-১বি ক্যাটাগরির ভিসায় রয়েছে। এই ক্যাটাগরির ভিসায় সীমাবদ্ধতা এনে কেবল সুদক্ষ কর্মীদের অভিবাসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে এই ক্যাটাগরিতে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের নিয়োগ করতে পারলেও তাঁদের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবিত এই খসড়ায় ডিভি লটারি ভিসা বিলুপ্ত করে এইচ-১বি প্রোগ্রামের আওতায় যাঁরা গ্রিন কার্ডের অপেক্ষায় আছেন, তাঁদের বিষয়টি শিথিল করার কথা বলা হয়েছে। এই ক্যাটাগরিতে ভিসা নিয়ে আসা ব্যক্তিকে যাতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান মার্কিন কর্মীদের স্থলাভিষিক্ত করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে খসড়ায়।
পরিমার্জিত এইচ-১বি ভিসার খবরে বিশ্বের বেশির ভাগ দক্ষ ও মেধাবী অভিবাসী খুশি হলেও সুন্নি মুসলমানরা খুশি হতে পারছেন না। ৫ ফেব্রুয়ারি ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) একটি নথি প্রকাশ করেছে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন। ওই নথিতে বলা হয়েছে, যাঁদের ‘পারসন অব ইন্টারেস্ট’ (নিরাপত্তাকর্মীদের চোখে যাঁরা সন্দিগ্ধ) হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাঁদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা মার্কিন সরকারের জন্য খুবই জরুরি। এই ‘সন্দিগ্ধ’ ব্যক্তি বলতে মার্কিন সরকার প্রধানত যাঁদের মনে করে, তাঁরা হলেন সুন্নি মুসলিম। নথিতে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার নাগরিক এবং আমেরিকায় বসবাসরত তরুণ ও পুরুষ মুসলিম ব্যক্তিদের ‘পারসন অব ইন্টারেস্ট’ মনে করা হয়। এই খসড়া যদি আইনে রূপ নেয়, তাহলে অতি দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও বেশির ভাগ সুন্নি মুসলিম এইচ-১বি ভিসা পাবেন না। এমনকি যে সুন্নি মুসলিমরা আমেরিকায় নাগরিকত্ব পেয়ে গেছেন, তাঁদের ওপরও নজরদারি বাড়বে। নির্বাহী ক্ষমতাবলে ট্রাম্প কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করে কার্যত ‘মুসলিম নিষিদ্ধ’ করার যে আদেশ দিয়েছিলেন, এই আইন মুসলমানদের জন্য তার চেয়েও বেশি দুর্গতি বয়ে আনবে।
আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
সৌজন্যে: প্রথম আলো