Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

china-military-drillভারত মহাসাগরে দীর্ঘদিন ধরেই নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে এসেছে চীন। এবার সমগ্র ভারত মহাসাগরকেই যেন চীন মহাসাগরে রুপান্তরিত করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে দেশটি। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতেই যেন একের পর এক বিনিয়োগ করে চলেছে তারা। তার অন্যতম উদাহরণ শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ। যা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের কাছে এক নতুন দিক খুলে দেবে।

অন্যদিকে মালদ্বীপকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চলেছে বেইজিং। শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপে চীনের এই আধিপত্য ভারতের কাছে দুশ্চিন্তার বলেই মনে করছে একাংশ। আর তার অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক। চীনের প্রভাবে শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপে ধাক্কা খেতে পারে ভারতীয় পণ্য। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত এবং চীনের সঙ্গে মালদ্বীপ ‘অবাধ বাণিজ্য চুক্তি’ করলে চীন প্রথমে মালদ্বীপে পণ্য পাঠিয়ে, পরে তা পুনরায় রপ্তানি করতে পারে ভারতে।

chardike-ad

এছাড়া অন্য কারণ হিসেবে ভৌগোলিক-রাজনৈতিক কারণকে তুলে ধরা যেতে পারে। বন্দরগুলিকে সামরিকক্ষেত্রে ব্যবহার করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে চীন জানালেও, এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ, বিগত কয়েক বছরে কলম্বোতে বারবার চীন তার শক্তি প্রদর্শণের চেষ্টা করেছে।

শ্রীলঙ্কায় ইতিমধ্যেই চীন সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে। পাকিস্তানেও নির্মিত হচ্ছে। মালদ্বীপ ও চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রও ক্রমে প্রসারিতই হচ্ছে। গেল বছর ডিসেম্বর মাসে মালদ্বীপ ও চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ গাদহতে চীনের সহায়তায় একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আলোচনাও চলছে কয়েক বছর ধরেই। ২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের মালদ্বীপ সফরকালে প্রধান বিমানবন্দর উন্নয়নের চুক্তি করা হয়। এর আগে মালদ্বীপ ভারতের সঙ্গে বিমানবন্দর উন্নয়নের চুক্তি বাতিল করে। ওই সময় ৬০০ মিলিয়ন আরএমবির (চায়নিজ মুদ্রা) অবকাঠামো উন্নয়ন, ২০ মিলিয়ন আরএমবির সামরিক সহযোগিতা ও দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার আওতায় বিভিন্ন সেবা খাতে বিনিয়োগের জন্য আরও ২০ মিলিয়ন আরএমবির চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ২০১৭ সালে তিন লাখ চীনা পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেন। রাজধানী মালের কাছে একটি দ্বীপ অবকাশ যাপন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৫০ বছরের লিজ নিয়েছে চীন। সন্দেহ নেই, এসব অর্থনৈতিক উদ্যোগ বহুল আলোচিত চীনের ‘মেরিটাইম সিল্ক রোড’ ডকট্রিনের অংশ।

চীনের এই মেরিটাইম সিল্ক রোডের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সামরিক উদ্দেশ্য হচ্ছে বাণিজ্যিক স্বার্থের আড়ালে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতকে ঘিরে ফেলা। এ কারণেই দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। পাকিস্তান শুরু থেকেই ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে চীনের মিত্র। শ্রীলঙ্কাও এখন অনেকটা ভারতের প্রভাবের বাইরে চলে গিয়েছে। সেখানেও চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। হাম্বানটোটায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। মিয়ানমারের আকিয়াবেও বন্দর পরিচালনা করছে চীন। এখন যদি মালদ্বীপেও বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে আড়ালে উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়, তবে ভারতকে আরও শক্তভাবে ঘিরে ফেলা সম্ভব হবে চীনের জন্য।

ভারতের প্রতিবেশী নেপালও এখন চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। দেশটি নতুন অর্থনৈতিক মিত্রের সন্ধান করছে। ইতিমধ্যেই নেপাল ও চীন একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে। এতে করে ভারতের ওপর নেপালের নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। এ ছাড়া রয়েছে ভুটান। অর্থনৈতিক, সামরিক দিক দিয়ে ভুটান চীনের জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাকি রইল বাংলাদেশ। সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে বলা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানের পর একমাত্র বাংলাদেশেই ভারতের একচ্ছত্র প্রভাব এখনো বিদ্যমান। যদিও বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয় করে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ও ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভারতীয় বলয় বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আড়ালে।

ভারত ও চীনের আঞ্চলিক রাজনীতির এই খেলার সাম্প্রতিক ক্ষেত্র হচ্ছে মালদ্বীপ। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদকে চীনের সহায়তাই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন। সম্প্রতি মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট নাশিদকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাইলে ইয়ামিন জরুরি অবস্থা জারি করে দেন। যা এখনো চলছে।

ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মালদ্বীপ ইস্যুতে ভারতে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আগামী বেশ কয়েক বছরই হয়তো মালদ্বীপকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র-ভার ও চীনের ঠাণ্ডা লড়াই জারি থাকবে।

সূত্র- কালের কণ্ঠ