বহুল প্রতীক্ষিত চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক তথা ফোরজি চালু হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি। এর দুই দিন আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক কর্তৃপক্ষের হাতে ফোরজি লাইসেন্স তুলে দেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তাদের মধ্যে সবার আগে ফোরজি সেবা চালু করতে চায় বাংলালিংক।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ক্লাবে স্পেক্ট্রাম (তরঙ্গ) নিলাম শেষে ফোরজি লাইসেন্স তুলে দেওয়ার ঘোষণা আসে। সেখানে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘লাইসেন্স হাতে পেলেই অপারেটররা ফোরজি সেবা দিতে পারবে।’
তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠান শেষে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক অস ঘোষণা দেন, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি ফোরজি সেবা চালু করবেন তারা।
অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ফলি বলেন, ‘আমরা লাইসেন্স পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ফোরজি সেবা চালু করবো।’
গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী। ফলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন এইচডি ভিডিও ও লাইভ টিভি স্ট্রিমিং আর ঝকঝকে ভিডিও কল এবং অতি দ্রুত গতিতে যে কোনও কিছু ডাউনলোড করতে পারবেন। গ্রামীণফোনের আধুনিক নেটওয়ার্ক উপভোগের জন্য থ্রিজি সিম পরিবর্তন করে ফোরজি সিম নিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ই নিজেদের মূল কথা বলে উল্লেখ করেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী। তিনি জানিয়েছেন, গ্রাহককে মানসম্মত সেবা দিতে গ্রামীণফোন গত বছরের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো উন্নত করেছে। তার ভাষ্য, ‘ফোরজির প্যাকেজ কী হবে তা আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো। আর ফোরজির গাইডলাইনে যা উল্লেখ থাকবে সেই অনুযায়ী গতি নিশ্চিত করা হবে।’
এদিকে দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটর ফোরজি চালুর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তাদের ফোরজি সিম বিক্রি শুরু হয়েছে অনেকদিন হলো। গ্রাহকরা সিম রিপ্লেস করতে গেলেও দেওয়া হচ্ছে ফোরজি সিম।
অপারেটরগুলো ইতোমধ্যে ‘টেস্ট রান’ হিসেবে ফোরজি সফলতা পেয়েছে। সেই হিসেবে বাংলালিংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ফোরজি সেবা চালুর শুরুতে ঢাকা ও খুলনায় গ্রাহকদের সেবা দিতে চায় অপারেটরটি।
মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ফোরজি চালুর দিনক্ষণ ঘোষণা না দিলেও তারাও যে কোনও সময় সেবা দিতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে। অপারেটরটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির (কমিউনিকেশন অ্যান্ড করপোরেট রেসপনসিবিলিটি) বলেন, ‘আমরা আরও উন্নত মানের ফোরজি সেবা নিয়ে আসছি।’
গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের পাশাপাশি ফোরজির লাইসেন্স পেতে সিটিসেল আবেদন করলেও তরঙ্গ নিলামে অংশ নেয়নি। তরঙ্গ না থাকায় সিটিসেল ফোরজি চালু করতে পারবে না এই শর্তে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে অপারেটরটি। ফলে চূড়ান্ত পর্যায়ে লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকসহ চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর।
ফোরজি দিয়ে কী হবে জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, মানুষ কিন্তু কথা বলার চেয়ে ডাটার (ইন্টারনেট) ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। গোটা পৃথিবীই ডাটার ওপর পরিচালিত হচ্ছে। এখন ডাটা অনেক দামি, কিন্তু তা ধীরগতির। ইন্টারনেট থেকে কিছু ডাউনলোড করতে গেলে অনেক সময় লাগে। ফোরজি এলে এসব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’
এছাড়া মোবাইল ওয়েব সেবা, আইপি টেলিফোনি, গেমিং সেবা, এইচডিটিভি, হাই-ডেফিনেশন মোবাইল টিভি, ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন (থ্রিডি টিভি) ও ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা পাওয়া যাবে ফোরজির মাধ্যমে।
গত ২৯ নভেম্বর সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ঘোষণা দেয়, নতুন বছরে দেশবাসীর জন্য উপহার হতে যাচ্ছে ফোরজি। এই সেবার সংশোধিত গাইডলাইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পরেই এ ঘোষণা আসে।
সেই সময় জানানো হয়— ফোরজির গতি হবে ২০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। যদিও পরে এই গতিও সংশোধন করা হয়েছে। তবে ফোরজির গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড গতি ১৬ এমবিপিএস। বাংলাদেশে ফোরজির ডাউনলোড গতি ১ এমবিপিএস থেকে শুরু করে এর ১ হাজার ২৪ গুণ, অর্থাৎ ১ জিবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে।
সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন