সৌদি আরবে বাংলাদেশি অপহরণের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। অপহরণ করে প্রতিনিয়ত দেশের বাড়িতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হচ্ছে। সম্প্রতি রিয়াদে আব্দুল হামিদ নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে সঙ্গে থাকা ৯৩ হাজার সৌদি রিয়াল ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। পাশাপাশি প্রতারক চক্রটি আব্দুল হামিদের বাড়িতে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। হামিদের দেশের বাড়ি নোয়াখালী।
আব্দুল হামিদ জানান, ‘আমি সৌদি আরবে কোম্পানির মালিকের সঙ্গে ব্যবসা করি। ওই মালিকের প্রতিষ্ঠানে বহু কোম্পানির শ্রমিক কাজ করে। অপহরণের দিন কর্মরত শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য মালিক আমাকে ৯৩ হাজার সৌদি রিয়াল দেয়।
তিনি জানান, ‘হঠাৎ আমার ফোনে কল আসে। বলা হয় এক ছোট ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। পরিচিত ভেবে তার সঙ্গে দেখা করতে যায়। এমতাবস্থায় প্রায় ৮ থেকে ৯ জন ব্যক্তি আমাকে ঘেরাও করে আঘাত করতে থাকে এবং মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাস চলা অবস্থায় তারা আমাকে খুব মারধর করে এবং ছিনিয়ে নেয় মোবাইল, মানিব্যাগ, নগদ টাকা। এরপর অপহরণকারীরা রিয়াদের আজিজিয়া নামক স্থানে কোনো এক বাসায় আমাকে চোখ বেঁধে আটকে রাখে’।
তিনি আরও জানান, ‘অপহরণকারীরা আমাকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করে এবং বাড়িতে ফোন দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। বাড়িতে ফোন না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমার বড় ভাই কাজিকে ফোন দিই। বিপদে পড়ার ইঙ্গিতও দিই। কাজি ভাইয়ের নাম শোনাতে অপহরণকারীরা ঘাবড়ে যায় এবং আমাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়’।
আব্দুল হামিদ জানান, ‘তারা আমাকে অন্য জায়গায় নিয়ে ২দিন আটকে রাখে। অপহরণকারীরা বুঝতে পারে সৌদি পুলিশ তাদের কল ট্র্যাক করেছে, এবং পুলিশ অভিযানে নেমেছে। একটা সময় তারা আমার হাতের আঙ্গুল কেটে ছাপ নেয়ার চেষ্টা করে। এরপর তারা আমাকে নির্যাতনের পর চোখ বাঁধা অবস্থায় রাস্তায় ফেলে চলে যায় ‘।
তিনি জানান, মেডিকেলে ভর্তি হয়ে সুস্থ হবার পর দূতাবাসে কথা বলার জন্য যাই। রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ ঘটনার বিস্তারিত শোনেন এবং ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন’।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের কাছে এমন অভিযোগ প্রায়ই আসছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি সৌদি আরবে বাংলাদেশি অপরাধের কোটা শূন্যতে আনতে। সাংবাদিকরা সহযোগিতা করলে অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হবে বলেও জানান গোলাম মসীহ।
জানা গেছে, অপহরণকারীদের মধ্যে চার জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে আব্দুল হামিদ। ইতোমধ্যে রিয়াদের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।