বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় অব্যাহতভাবে চলতে থাকা প্রশ্নফাঁস বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এমন কোনো চাবি নেই যে, তা ঘুরালেই প্রশ্নফাঁস বন্ধ হয়ে যাবে। তবে প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এখন পরীক্ষার তিন মাসের মধ্যে প্রশ্নফাঁস হয় না। পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্নপত্র আউট হয়ে যায়। অনেক শিক্ষক এটা করে। আমরা প্রশ্নফাঁসকে ক্রমে গুটিয়ে এনেছি। পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে আমরা আধঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছি।
গতকাল সচিবালয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবইয়ের মানোন্নয়ন বিষয়ে শিক্ষাবিদদের সাথে বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস কোনো কালেই বন্ধ হয়নি। সব সময়ই প্রশ্নফাঁস হয়েছে। আমার শিার বয়স ৬০ বছর। তখন থেকেই প্রশ্নফাঁস ছিল। কিন্তু ওই সময় এত ব্যাপকভাবে প্রচার হতো না। প্রচারের এত ব্যবস্থা ছিল না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না। যে কারণে প্রচার কম হয়েছে। কিন্তু এখন প্রচার বেশি হচ্ছে। কেউ কেউ আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য ফেসবুকেও দিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস একটি অপরাধ। দেশে অপরাধ চিরকাল ধরেই আছে। খুন একটি অপরাধ। খুন করলে ফাঁসি হয়, এটা কি বন্ধ হয়ে গেছে? প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে, বিচার হচ্ছে, ফাঁসি হচ্ছে, আবার খুন হচ্ছে।
প্রশ্নফাঁস বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ব্যর্থ এ কথা বলছি না। এখন পরীার দিন ছাড়া প্রশ্নফাঁস হয় না। এসব জায়গায় আমরা একদম গুটিয়ে নিয়ে এসেছি। আপনারা বিবেচনা করবেন, আমরা সফল না ব্যর্থ। তিনি বলেন, বিজি প্রেস থেকে আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো, এখন আর তা হয় না। জেলায় জেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না, পরীা চলাকালে তিন মাসের মধ্যে হয় না, হয় পরীার দিন। আমরা সেটাও বন্ধের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা গার্ডিয়ানদের আহ্বান জানাচ্ছি, আপনি আপনার সন্তানদের নষ্ট করবেন না। দয়া করে আপনার সন্তানকে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ বাড়াতে তাগাদা দিন। টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে দিয়ে আপনার সন্তানের সর্বনাশ করবেন না। টিচারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, শিার্থীকে ভালো শিা দিয়ে গড়ে তোলেন। তবেই আপনার সার্থকতা।
সভায় শিক্ষাবিদেরা পাঠ্যবই সহজীকরণ, বইয়ের বোঝা কমানো এবং ঘন ঘন পাবলিক পরীক্ষা কমানোরও পরামর্শ দিয়েছেন।
সভায় উপস্থিত শিাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, আমেরিকায় পাঠ্যবই অনেক সুন্দর, সুখপাঠ্য, উপন্যাসের মতো। শিার্থীরা আনন্দ নিয়ে সে বই পড়ে। আমি চাই আমাদের বইগুলো সে রকম হোক।
সভায় উপস্থিত আরেক শিাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বারবার পরামর্শ দিয়েছি পাবলিক পরীা কমানোর জন্য। জাতীয় শিানীতিতে আছে দু’টি বিষয় পাবলিক পরীা নিতে হবে। এখন অনেক বেশি। আশা করছি, শিা মন্ত্রণালয় আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, শিার্থীদের ওপর থেকে চাপ কমাতে হবে। চাপ কমাতে পাঠ্যবই কমাতে হবে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সভায় আর যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন শিাবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন, অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ।