রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া চীন তিনটি ধাপে সংকট উত্তরণের প্রস্তাব দিয়েছে। ঢাকা সফর শেষে মিয়ানমার সফরে গিয়ে সে দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের সময় এই প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
প্রস্তাবের প্রথম ধাপে, একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে রাখাইনে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, যেন জনগোষ্ঠীর পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে শান্তিতে বসবাস করতে পারে; দ্বিতীয় ধাপে, সমতার ভিত্তিতে সংকট উত্তরণের জন্য সব পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে পারস্পরিক আলোচনায় উদ্বুদ্ধ করা; তৃতীয় ও শেষ ধাপে, রাখাইনের আর্থসামাজিক
উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাহায্য ও সহযোগিতা করা। মিয়ানমারের সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বলে বার্তা সংস্থা এপি ও সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে গতকাল শুরু হয়েছে ৫১ দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম)-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন। আয়োজক মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো লিডার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসবাদের উত্থানের বিষয়ে কথা বলেন। সু চি বলেন, অবৈধ অভিবাসনের জন্যই বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ ভয়াল চেহারা ধারণ করছে। যদিও রাখাইন থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা বিতাড়ন করার বিষয়ে মিয়ানমারের নেত্রী কোনো কথা বলেননি। অথচ এই রোহিঙ্গারাই জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সাগরপথে বিভিন্ন দেশে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চলে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এএফপির খবরে। উদ্বোধনী ভাষণে সু চি বলেন, আসেম সম্মেলন এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
সবার অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বৈশ্বিক সংকট উত্তরণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে আসেম। তবে এ যোগাযোগ শুধু সরকারগুলোর মধ্যে করলে প্রকৃত সফলতা আসবে না, দেশগুলোর জনগণের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। উদ্বোধনী অধিবেশনে সু চির পর ফিলিপাইন, পাকিস্তান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এস্তোনিয়ার প্রতিনিধিরা ভাষণ দেন। পরে তারুণ্যের দুই প্রতিনিধি তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন উদ্বোধনী সেশনে। সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী আসেম সম্মেলনে একাধিক প্লেনারি সেশন আয়োজন করা হয়েছে। ‘শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা’ এবং ‘আসেমের তিন দশক : আসেম অংশীদারিত্বকে আরও দক্ষ ও কার্যকর করা’ শীর্ষক এসব প্লেনারি সেশনে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে, মিটিংরে সাইডলাইনে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল এমনই এক বৈঠকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক হাই-রিপ্রেজেনটেটিভ ফেদেরিকা মঘেরিনি। এ সময় ইইউ প্রতিনিধি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরাতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে অবশ্যই সমঝোতা চুক্তি প্রয়োজন বলেও জানান ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান। আর এ প্রক্রিয়ায় ইইউ সব সময় পাশে থাকবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রীকে।
এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীও অংশ নিচ্ছেন। মূল বৈঠকের সাইডলাইনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে। এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া জাপান, জার্মানি, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কথা জানিয়ে গেছেন।