রেলের কোচ সংকট নিরসনে প্রায় এক বছর আগে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয় ১৫০টি কোচ। আমদানির পর থেকেই ত্রুটি লেগে আছে এসব কোচে। কোচগুলোয় যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। এসব ঘটনায় বিব্রত রেলওয়ে ত্রুটি সারাতে কয়েক দফায় চিঠি দিয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু এতেও ত্রুটিমুক্ত করা যায়নি কোচগুলো।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের আগস্টে দেশে ১০০টি মিটার গেজ ও ৫০টি ব্রড গেজ যাত্রীবাহী কোচ আমদানি হয়। ইন্দোনেশিয়ার ইনকা করপোরেশনের কাছ থেকে ৪৬৮ কোটি টাকায় কোচগুলো আমদানি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নিয়ম অনুযায়ী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দেড় বছর পর্যন্ত কোচগুলোর সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি সারিয়ে দেয়ার কথা। এছাড়া আরো প্রায় ছয় মাস ইনকা করপোরেশনের প্রকৌশলীদের বিনা খরচে ত্রুটিজনিত কোচ মেরামত করে দেয়ার কথা রয়েছে চুক্তিতে। সে অনুযায়ী বড় ত্রুটিগুলো দীর্ঘ সময় নিয়ে সারিয়ে তোলা হলেও ছোট ত্রুটির ক্ষেত্রে রেলের যাত্রী পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে।
২০১৬ সালের শেষদিকে কোচগুলোর নকশার ত্রুটিজনিত সমস্যা সমাধানে কোচ আমদানি প্রকল্পের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে রেলের যান্ত্রিক প্রকৌশল ও বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগ থেকে একাধিক চিঠি দেয়া হয়। তবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রকৌশলীরা অধিকাংশ সময়ই ত্রুটি সারিয়ে তুলতে দীর্ঘসূত্রতা দেখাচ্ছেন। ফলে ত্রুটিযুক্ত কোচ নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে রেলওয়েকে।
রেলের পরিবহন বিভাগ জানিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই নতুন কোচে ত্রুটি কম থাকে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কোচগুলোর ত্রুটি অস্বাভাবিক পর্যায়ে ঠেকেছে। কেবল নকশাগত ত্রুটির কারণে ১০-১২টি কোচ ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ ১০টি কোচ দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করতে রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে লিখিত চিঠি দিয়েছে রেলের বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগ। স্বাভাবিক নিয়মে নতুন কোচ থেকে রেলওয়ে সর্বোচ্চ যাত্রীসেবার পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশ তুলে নেয়ার চেষ্টা করলেও ইন্দোনেশীয় এসব কোচের ত্রুটিজনিত কারণে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, আমদানি করা কোচগুলোয় যান্ত্রিক ত্রুটির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ত্রুটিও কম নয়। আমরা প্রতিনিয়ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। কোচ সরবরাহের দেড় বছর পর্যন্ত কোম্পানিটি ত্রুটি সারিয়ে দেবে। তবে বেশকিছু কোচের সমস্যা প্রকট হওয়ায় অনেক সময় ত্রুটি সারাতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। এতে যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে।
আমদানি করা কোচের ত্রুটিজনিত সমস্যা পর্যালোচনায় রেলের এক নথিতে বলা হয়েছে, আমদানিকৃত ইন্দোনেশীয় এসি কোচ নং-ডব্লিউজেসিসি ১৩১৭-এর পানির ট্যাংকের রাবার সিল নষ্ট হয়ে এসি প্যানেল বোর্ডের ভেতরে পানি প্রবেশ করায় গত ২৫ জুলাই কোচটির এসি কন্ট্রোল প্যানেল ট্রান্সফরমারে (৪০০/১১০ ভোল্ট) আগুন ধরে যায়। এছাড়া পাওয়াকার নং-১১০৬, ১১০৭, ১১০৮, এসি কোচ নং- ডব্লিউজেসিসি ১৩১৩, ১৩১৭, ১৩২৩, ১৩২৪, ডব্লিউজেসি ১২০৭, ১২০৮ ও ডব্লিউইসিডিআর ১৪১২-এর উভয় পাশে পানির ট্যাংকে লিকেজ ও ট্যাংকের রাবার সিল নষ্ট হয়ে যায়।
অন্যদিকে আমদানি করা কোচগুলোর চাকা ত্রুটিজনিত কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া আন্ডার গিয়ারের সমস্যার কারণেও প্রতি সপ্তাহে বেশকিছু নতুন কোচ মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপে পাঠাতে হচ্ছে রেলওয়েকে।
রেলের সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, সাধারণত নতুন আমদানি করা কোচে ত্রুটি কম থাকে। প্রায় এক দশক আগে রেলওয়ে চীন থেকে কোচ আমদানি করেছিল। সেসব কোচে এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়নি। তবে সদ্য আমদানি করা কোচে একাধিক ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ওয়ারেন্টি পিরিয়ডে এসব ত্রুটি শনাক্ত হওয়ায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা তা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রকৌশলীদের অধিকাংশই অতটা অভিজ্ঞ না হওয়ায় ত্রুটি সমাধানে বেগ পেতে হচ্ছে। বণিকবার্তার সৌজন্যে।