ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে মারাত্মক আঘাত পেয়ে সেই আঘাতপ্রাপ্ত পা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) পরীক্ষার ভাইভা দিতে ভাইভা কেন্দ্রে হাজির হবার বিরল ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আইন বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী সুজন শেখ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ফুটবল টিমের অন্যতম খেলোয়াড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ত বিভাগ ফুটবল টুর্ণামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালের একটি ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের আঘাতে ডান পায়ে গুরতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এতে তার ডান পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়, কিন্ত খেলার পাশাপাশি মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলার কারণে তিনি আহত অবস্থাতেই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
লিখিত পরীক্ষা শেষে ভাইভা পরীক্ষার জন্য তিনি বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ এর নিকট হাসপাতালে যেয়ে তার ভাইভা নেয়ার অনুরোধ জানালেও অনুরোধে সাড়া না পাওয়ায় প্লাস্টার করা ভাঙ্গা পা নিয়েই ভাইভা কেন্দ্রে এসে হাজির হন।
ঢাবি শিক্ষার্থী শাহেদ খান এক মন্তব্যে লিখেছেন, ‘গতবছর আমাদের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিল সুজন। গতবছর আইন বিভাগ আন্তবিভাগ ফুটবলে একটি মাত্র গোল পেয়েছিলো সেটিও সুজনের কল্যাণে। এবছর যে গোলটি আমাদের টিম কে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে আসতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলো সেটিও তার’ই কল্যাণে এবং সেই গোল দিতে যেয়েই তার পা ভেঙে যায়। এবছর প্রথম থেকেই বলছিলো সে খেলবেনা কারণ তার মা অসুস্থ। মাস্টার্সের পরীক্ষা এসব মিলিয়েই সে খেলতে রাজি ছিল না। আমি এবং সাদ্দাম হোসেইন এক প্রকার জোর করেই তাকে অনুশীলনে আনি এবং একপর্যায় সে খেলতে সম্মত হয়। ডিপার্টমেন্টে যারা খেলেছেন এবং এখনও যারা খেলছেন তারা বিষয়টা আঁচ করতে পারবেন, এটা অনেকটা নিজের খেয়ে বনের মেষ তাড়ানোর মত! অনেক কিছুই বলার ছিল সব কথা বলতে হয় না। শুধু এটুকুই বলব তোকে এভাবে ভাইভা’য় অংশগ্রহণ করা দেখব ভাবি নাই।’
পরীক্ষা না দেয়ার কোন অজুহাতকেই গ্রাহ্য না করে লিখিত, ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ক্যাম্পাস জুড়ে প্রশংসার পাত্র হয়েছেন সুজন শেইখ নামের এই শিক্ষার্থী। তবে সুজন শেইখ নামক এই শিক্ষার্থী প্রশংসার বন্যায় ভাসলেও আহত অবস্থায় ভাইভা কেন্দ্রে হাজির হবার বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেছেন কিছু শিক্ষার্থী।
তমা নামের আইন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ফেইসবুকে কমেন্ট করে বলেন সুজন শেইখ ডিপার্টমেন্টের জন্যে খেলতে গিয়ে আহত হয়েছে এই অবস্থায় তাকে ভাইভার দায় থেকে মুক্তি দিলে সে হয়ত শারীরিক ও মানুষিক ভাবে আরো ভালো আর শান্তি বোধ করতো।
মিজানুর রহমান শিকদার নামক একজন শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন সুজনের ভাইভা যদি মেডিক্যালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে/ সিটে গিয়ে নেয়া যেত তাহলে আরো ভাল হত।
সুজন শেইখ প্রসঙ্গে আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সুপন ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন ‘মাস্টার্সের ভাইভায় একজনের পরে একজন আসিতেছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে দরজা খুলিয়া ভাইভা কক্ষে যাহা প্রবেশ করিল তাহার জন্য আমি কিংবা মিজান স্যার কেহই প্রস্তুত ছিলাম না। বেচারা সুজন শেখ আইন বিভাগের হইয়া ফুটবল খেলিতে গিয়া তাহার বাম পদের সর্বনাশ ডাকিয়া আনিয়াছে। চলমান শয্যা সমেত সে ভাইভা কক্ষে প্রবেশ করিল। এহেন ভাইভার অভিজ্ঞতা কস্মিনকালে হয় নাই, নিশ্চিত করিয়াই বলা যায় ভবিষ্যতেও হইবে না। সুজন শেখের দ্রুত আরোগ্য কামনা করিতেছি।”
আহত সুজন শেইখ বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পাঠাগার বিষয়ক উপ-সম্পাদক।