Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
natasa
প্রতীকী ছবি

স্পেনের নওমুসলিম নারী ‘কারি আন ওয়েন’-এর মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরা হল:

কারি আন ওয়েন আমেরিকায় বসবাসকারী এক স্প্যানিশ নারী। কৈশোর থেকেই নাটক রচনা তার আগ্রহের বিষয়। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: আমি এমন এক আধ্যাত্মিক অনুভূতির খোঁজ করতাম যা আমাকে দেবে বিশেষ প্রশান্তি। কিন্তু সামাজিক পরিবেশ আমাকে সে সুযোগ দেয়নি। আর এ কারণেই আমি নাটক লিখতে আগ্রহী হই যাতে আমার মনের কথাগুলো তুলে ধরতে পারি। কোনো এক বিখ্যাত নাটক-প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু একটি খবর শোনার পর আমার মধ্যে শুরু হয় পরিবর্তন। খবরটি ছিল এটা যে, ওই প্রযোজক সমকামিতার কারণে এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ফলে মার্কিন ও পশ্চিমা সমাজ সম্পর্কে আমি পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়ি। আমি শিল্পকে পবিত্র বলে মনে করি। কিন্তু ব্যক্তি যদি নৈতিক চরিত্রের অধিকারী না হন তাহলে তিনি যে পদমর্যাদার অধিকারীই হোন না কেন অবশ্যই বিচ্যুত বা পথভ্রষ্ট হবেন।

chardike-ad

ইউরোপে এখন থেকে কয়েকশ’ বছর আগে গির্জার নানা ভুল তৎপরতা ও অন্য আরো কিছু কারণে সৃষ্টি হয় তথাকথিত মানবতাবাদ। এ মতাদর্শের দৃষ্টিতে সব কিছুরই মূল হল মানুষ এবং মানুষ সব বিষয়েই স্বাধীন। তাই স্বার্থই হয়ে পড়েছে পশ্চিমাদের কাছে মুখ্য বিষয়। এ নীতি পাশ্চাত্যের সামাজিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ জীবনের সব ক্ষেত্রেই সৃষ্টি করেছে সংকট। পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমও হয়ে পড়েছে নানা ধরণের বিচ্যুতির প্রচারক। মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা, নবী-রাসূলগণের শিক্ষা-এসবই হয়ে পড়েছে চরম অবহেলিত বিষয়। ফলে আজ পশ্চিমা দেশগুলোর সংসদে সমকামিতার ঘৃণ্য পাপাচারের পক্ষে আইন পাশ হচ্ছে।

আর পাশ্চাত্যের এমন পরিবেশেও ‘কারি আন ওয়েন’ আধ্যাত্মিকতার সন্ধান করতেন। কিন্তু বস্তুগত ক্ষেত্রে বিপুল অগ্রগতি সত্ত্বেও অর্থহীনতা ও বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত পাশ্চাত্য তার আধ্যাত্মিক বা আত্মিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়নি। ফরাসি চিন্তাবিদ অ্যালেক্সিস ক্যারেল এ প্রসঙ্গে লিখেছেন,

“আমরা ধর্মীয় বিধানের মত নীতিমালা হারিয়ে ফেলেছি। আধুনিক প্রজন্ম এটা জানেও না যে অতীতে এ ধরনের কিছু নীতিমালা বা মূল্যবোধের অস্তিত্ব ছিল। যেমন, পবিত্রতা, দায়িত্বশীলতা, বন্ধুত্ব, বিনম্রতা, মর্যাদা, মানব-প্রেম, সাহসিকতা ইত্যাদি। আজ যেন এসবই অর্থহীন শব্দ ও পরিহাসের বিষয়। ….পশ্চিমা মানুষ এখন ভোগ ও তৃপ্তি ছাড়া জীবন যাপনের ক্ষেত্রে যেন অন্য কিছুই বোঝে না। তাদের সবাই অহমিকায় ভোগেন এবং নিজের সমধর্মীকে হত্যা করছে কাঁকড়ার মত। বদলে গেছে সামাজিক সম্পর্কগুলো, ছড়িয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্নতা সব ক্ষেত্রে, দাম্পত্য-জীবনও এখন আর পশ্চিমা নারী-পুরুষের বন্ধনকে জোরালো করতে পারছে না। অন্যদিকে বস্তুবাদী জীবন মানুষকে এতটা স্বার্থপর করে তুলেছে যে তারা পারিবারিক জীবনে শিশুদের স্বর্গীয় উপস্থিতিকেও ঝামেলা বা বিরক্ত হওয়ার মাধ্যম বলে মনে করে। এভাবে হারিয়ে গেছে অতীতের সব মূল্যবোধ যা একদিন আমাদের শিখিয়েছিলেন পূর্বপুরুষরা সামাজিক ও পারিবারিক অঙ্গনে।”

পশ্চিমা সমাজের এই অবস্থার কারণেই ভিন্ন সমাজের দিকে দৃষ্টি দিতে বাধ্য হন ‘কারি আন ওয়েন’ এবং মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে পরিচিত হন ইসলামের সঙ্গে। একজন মুসলিম নারী এক্ষেত্রে তার জন্য গবেষণার পথ সহজ করে দেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

“হিজাব পরা ওই মুসলিম নারী ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও দয়াদ্র। তিনি চারটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। তার বিনম্র ও সুন্দর আচরণ আমাকে মুগ্ধ ও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আমি এ থেকে বুঝতে পারলাম যে ইসলাম কিভাবে মানুষের আচরণে প্রভাব ফেলেছে। অথচ আমি এমন এক সমাজে বড় হয়েছি যেখানে নারীর মূল্য নির্ভর করে তার বাহ্যিক আকর্ষণ বা চাকচিক্যের মাত্রার ওপর। ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা অব্যাহত রেখে এটাও বুঝলাম যে,, এই ধর্মটি খুব শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত। মুসলমানদের সঙ্গে যোগাযোগ যতই বাড়ছিল ততই এ ধর্মের সত্যতার নানা দিক আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল।”

এভাবে ইসলামের মধ্যে আত্মিক চাহিদাগুলোর খোরাক খুঁজে পান মার্কিন নারী ‘কারি আন ওয়েন’। আল্লাহর দাসত্বের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে থাকেন ইসলামের ছায়াতলে। এ মহান ধর্ম কুপ্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মানুষকে এনে দেয় পূর্ণতা। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

“মানুষ যখন আল্লাহর পথে এগিয়ে যায় তখন অনেক সামাজিক সংকট বা সমস্যাগুলো বিলুপ্ত হয়। এমনকি ইসলামের সবচেয়ে সহজ বিধান মান্য করা হলেও তা মানুষের ওপর গভীর আধ্যাত্মিক প্রভাব ফেলে। যেমন, নামাজ আমাকে দেয় নিরাপত্তা ও প্রশান্তি। এ যেন এমন এক শক্তিশালী দুর্গে আশ্রয় নেয়া যার কোনো ক্ষয় নেই। যে কথাগুলো বলা হয় নামাজে তা আল্লাহর পরিচিতি তুলে ধরে এবং এর মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া হয় আল্লাহর সুন্দরতম গুণগুলো।”

ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর নিজের অনুভূতি তুলে ধরে মার্কিন নও-মুসলিম ‘কারি আন ওয়েন’ বলেন:

“আমার মতে, ইসলাম হচ্ছে বিভ্রান্তি ও অন্ধকার হতে মুক্তির পথ। ইসলাম আমার জীবনকে করেছে অর্থ ও লক্ষ্যপূর্ণ। মুসলমানদের সমাবেশগুলোয় আমি অনুভব করেছি আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য। মুসলিম নারীর হিজাব তাকে দেয় আধ্যাত্মিকতা ও বিনম্রতা। বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি মুসলমান নানা অঞ্চলে থাকা সত্ত্বেও তারা চিন্তা ও মনের দিক থেকে রয়েছে অভিন্ন অবস্থানে, বিষয়টি কতই না সুন্দর। ইসলামের এইসব সৌন্দর্য দেখে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি: এক আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর রাসূল।”

মহান আল্লাহ সম্পর্কে নিজের অনুভূতি তুলে ধরে মার্কিন নও-মুসলিম নারী ‘কারি আন ওয়েন’ বলেছেন:

“অস্তিত্ব জগতের স্রষ্টাকে যদিও দেখা যায় না, কিন্তু দয়া ও প্রেমের মধ্যে দেখা যায় তাঁর উপস্থিতি এবং তাঁকে অনুভব করা যায় বিশ্বজুড়ে তাঁর নানা ক্ষমতা ও জ্ঞানের প্রকাশে। আমি মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি যে তিনি আমাকে মুসলমান করেছেন। আমার সন্তানও দয়াময় ও প্রিয় খোদাকে চিনতে পারবে এবং অনুভব করতে পারবে ইসলামের আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যগুলো-এটা আমার একান্ত প্রার্থনা।”