দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলেও যানজট কমেনি। বরং যানজটের মাত্রা কয়েকগুন বেড়েছে। উদ্বোধনের দিনেই যানজটের রেশ খোদ ফ্লাইওভারেও এসে পৌঁছেছে। যার ফলে তিন তলাবিশিষ্ট এই ফ্লাইওভারের উদ্বোধনের দিনেই নগরবাসী দেখেছে তিন তলা যানজট!
এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ফ্লাইওভার চালু হওয়ার আগের নগরবাসীর ধারণা ছিল-ফ্লাইওভারটি ৮টি এলাকার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কারণে বদলে যাবে নগরীর চিত্র। যানজটের মতো যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন কর্মজীবী মানুষ। কিন্তু সে আশা গুঁড়েবালি। উল্টো যানজটের মাত্রা আরও বেড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন লুপের শুরুর দিকে যানবাহনের চাপ খানিকটা কম থাকলেও লুপগুলো থেকে নামার পথেই শুরু হয় যানজটের তীব্রতা। ফ্লাইওভারের এসব অংশ থেকে পরের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত যানজট।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় পুরো ফ্লাইওভারটি। এরপরই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে যানবাহনের চাপ। বিকাল ৩টার পর থেকেই তা পরিণত হয় তীব্র যানজটে।
সরেজমিনে ফ্লাইওভারে গিয়ে দেখা যায়, এর ইস্কাটন অংশ থেকে শুরু হয়ে মৌচাক মোড়ের সিগন্যাল পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। এক চালক বিরক্তির সঙ্গে বলেন, ‘এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল মৌচাক অংশ থেকে ইস্কাটনে নামতে পারিনি। সামনে কখন যে সিগন্যাল ছাড়বে, তাও বুঝা যাচ্ছে না।’
রামপুরা থেকে শান্তিনগর ও রাজারবাগ অংশের রাজারবাগ থেকে মালিবাগ হয়ে মৌচাক ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যন্তও দেখা গেছে একই চিত্র।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন বসুন্ধরা গেইটে দাঁড়িয়ে আছেন মঈন উদ্দিন। তিনি যাবেন সদরঘাটে। কিন্তু পুরো এলাকায় জ্যাম। বসুন্ধরা গেট থেকে মধ্যবাড্ডা পর্যন্ত সব গাড়ি আটকে আছে। বিপরীতে বসুন্ধরা গেট থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্তও যানবাহনে ঠাসা।
গুলিস্তানগামী এক যাত্রী বলেন, ‘মনে করেছিলাম মৌচাক ফ্লাইওভার হওয়ার কারণে এই এলাকা দিয়ে পানির মত সহজে যাতায়াত করতে পারবো। কিন্তু সেটি তো আরও বেড়েছে।’
মালিবাগ ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মজীবী হতাশার সুরে বলেন, ‘ফ্লাইওভার হয়েও কোনো কাম হইলো না। একেকটা তলায় ওঠার পর কিছু দূর যেতে না যেতেই যানজট আরম্ভ হয়।’
ফ্লাইওভারের দ্বিতীয় তলার মৌচাক ও মালিবাগ অংশে ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টে বৃহস্পতিবার রাতে গিয়ে দেখা যায়, স্থির দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক গাড়ি। বাংলামোটরের ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এই যানজট।
ফ্লাইওভারের নিচের সড়কেও ছিল তীব্র যানজট। অন্যদিকে, সাতরাস্তা-মাগবাজার-হলি ফ্যামিলি অংশে আগের চিত্রই দেখা গেছে। এ অংশটি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ফ্লাইওভারে ওঠার পর মগবাজার থেকে হলি ফ্যামিলি হসপাতাল পর্যন্ত যানজট লেগেছিল। একই চিত্র দেখা যায় হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত অংশেও। আবার শান্তিনগর থেকে মালিবাগ-মৌচাক হয়ে হাজী পাড়ার শহীদী মসজিদে যাওয়ার সময় মৌচাক সিগন্যালে কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষার পর দ্রুত চলে যেতে পেরেছে যানবাহনগুলো।
মগবাজারের বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘মনে করেছিলাম ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর যানজট থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে রাস্তার যে চেহারা দেখেছি তাতে মনে হয় না দুর্ভোগ আমাদের ছাড়বে।’