প্রথম চার ম্যাচ হেরে শ্রীলঙ্কার সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। আজ শেষ ওয়ানডেতে লঙ্কানদের সামনে ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কিসের হোয়াইটওয়াশ এড়াবে, উল্টো সিরিজে আরেকবার ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রদর্শনী মেলে ধরে মাত্র ১০৩ রানেই গুটিয়ে গেল তারা! পাকিস্তান সেটি পেরিয়ে গেছে ৯ উইকেট আর ১৭৮ বল হাতে রেখেই।
এই নিয়ে টানা ৯টি ওয়ানডে জিতল পাকিস্তান। সরফরাজ আহমেদের দল সিরিজ জিতল ৫-০ ব্যবধানে। আর শ্রীলঙ্কা হারল টানা ১২টি ওয়ানডে। সেই সঙ্গে গড়ল লজ্জার রেকর্ড। ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে এক বছরে তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইওয়াশ হলো শ্রীলঙ্কা। এর আগে বছরের শুরুতে তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫-০ ও আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশের মাটিতে ভারতের কাছে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল।
শারজাহতে টস জিতে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন পাকিস্তানের পেসার উসমান খান। তার বোলিং তোপে পড়ে মাত্র ২০ রানেই ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ৫ উইকেটই নেন উসমান। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উসমান জোড়া আঘাত হানেন। আগের ম্যাচে তিনি অভিষেকে দ্বিতীয় বলেই উইকেট নিয়েছিলেন। আজ প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে নিয়েছেন ২ উইকেট। পঞ্চম বলে বোল্ড হয়েছেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। পরের বলে সরফরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দিনেশ চান্দিমাল। দুজনই মেরেছেন ডাক!
তৃতীয় ওভারে উসমানের হ্যাটট্রিক বলটা চার হাঁকিয়েছিলেন উপুল থারাঙ্গা। তবে এক বল পরই শ্রীলঙ্কান অধিনায়ককে বোল্ড করেন উসমান। পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন নিরোশান ডিকভেলা। তখন শ্রীলঙ্কার ৮ রানেই নেই ৪ উইকেট!
স্কোরটা ২০-এ যেতেই পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন মিলিন্ডা সিরিবর্ধনেও। এবারও ঘাতক উসমান। তার চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে পয়েন্টে ফখর জামানের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে নেন সিরিবর্ধনে।
মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেট পেলেন উসমান। তাও মাত্র ২১ বলের মধ্যে! ২০০১ সালের পর ওয়ানডেতে তার চেয়ে কম বলে ৫ উইকেট নিতে পেরেছেন মাত্র দুজন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস ১৬ বলে ও ২০১৩ সালে কানাডার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের ফন ডের গাগটেন ২০ বলে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। ৪ ওভার শেষে উসমানের বোলিং ফিগার ৪-০-১৮-৫!
শ্রীলঙ্কা সর্বনিম্ন রানের (৩৫) নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে কি না, সেটা নিয়েই তখন আলোচনা। সেটা অবশ্য হতে দেননি লাহিরি থিরিমান্নে ও সেকুগে প্রসন্ন। দুজন ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ২৯ রানের জুটি। হাসান আলীর বলে থিরিমান্নের (১৯) বিদায়ে এ জুটি ভাঙার পর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ২৬.২ ওভারে তারা অলআউট হয় ১০৩ রানে। সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন থিসারা পেরেরা। প্রসন্নর ব্যাট থেকে আসে ১৬ রান।
উসমান পরে আর উইকেট পাননি, ৩৪ রানে ৫ উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার। আরেক পেসার হাসান ও স্পিনার শাদাব খান নেন ২টি করে উইকেট।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান উদ্বোধনী জুটিতেই তোলেন ৮৪ রান। ফখর ৪৮ রান করে ফিরলেও ইমাম দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন। তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে। ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ফাহিম আশরাফ। ম্যাচসেরা হয়েছেন উসমান খান, সিরিজসেরা হাসান আলী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
শ্রীলঙ্কা: ২৬.২ ওভারে ১০৩ (থারাঙ্গা ৮, সামারাবিক্রমা ০, চান্দিমাল ০, থিরিমান্নে ১৯, ডিকভেলা ০, সিরিবর্ধনে ৬, প্রসন্ন ১৬, পেরেরা ২৫, ভ্যান্ডারসে ২, চামিরা ১১, ফার্নান্দো ৭*; উসমান ৫/৩৪, হাসান ২/১৯, শাদাব ২/২৪)
পাকিস্তান: ২০.২ ওভারে ১০৫/১ (ইমাম ৪৫*, ফখর ৪৮, ফাহিম ৫*; ভ্যান্ডারসে ১/৩০)
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজ পাকিস্তান ৫-০ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: উসমান খান
ম্যান অব দ্য সিরিজ: হাসান আলী।