Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

shakib-mashrafeক্রিকেটাররা একটা সিরিজ হারলেই নিউজ ফিডে উড়ে আসে একটার পর একটা তীর্যক মন্তব্য। সেই মন্তব্যের কোনো কোনোটা উড়িয়ে দেই আমরাও- যারা দিনমান পড়ে থাকি ক্রিকেট নিয়ে। কেউ কেউ তো কয়েক লাইন এগিয়ে বলে দেন, দেশের টাকা খেয়ে খেয়ে ক্রিকেটাররা সব গোল্লায় যাচ্ছেন।

সত্যিই কি তাই? ক্রিকেটাররা কি সত্যিই টাকার পাহাড় গড়ছেন? নাকি আসলে দিনের পর দিন তারা বঞ্চিত হচ্ছেন? একটা তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখা যাক।

chardike-ad

কোন দেশের ক্রিকেটাররা কতো আয় করেন, কোচরা কতো টাকা বেতন পান-এসব নিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা হচ্ছে। সেই আলোচনায় চোখ রাখলে মনে হবে যে, মাশরাফি-সাকিবরা আসলে টাকার পাহাড় গড়ছেন না, তারা বরং অন্য দেশের ক্রিকেটারদের তুলনায় বঞ্চিত হচ্ছেন! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে মাশরাফি-সাকিবরা আসলে কতো টাকা আয় করছেন, সে দিকে যাওয়ার আগে দেখে নেয়া যাক বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রিকেটারদের আয়ের খবর। এই খবরে থাকছে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে আয় করা টাকার হিসাব। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি খেলে বেড়ানো বা পণ্যদূত হয়ে ক্রিকেটাররা যে অর্থ আয় করেন, এই হিসাব আপাতত থাকছে না। সে সব নিয়ে বসা যাবে অন্য কোনো দিন।

শুরু করা যাক অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং ভারতকে দিয়ে। মজার ব্যাপার হলো ভারত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড হলেও কেন্দ্রীয় চুক্তি ও ম্যাচ ফি থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা কিন্তু বিরাট কোহলি আয় করেন না। বরং এই দুই খাত থেকে বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করা ক্রিকেটার হলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। বছরে প্রায় দেড় মিলিয়ন (১.৪৭ মিলিয়ন) ডলার আয় করেন তিনি। এই তালিকায় দ্বিতীয় ক্রিকেটার হলেন জো রুট। বছরে তার আয় ১.৩৮ মিলিয়ন ডলার। আর বিরাট কোহলি বছরে পান এক মিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় চুক্তি ও ম্যাচ ফি থেকে স্টিভেন স্মিথ বা জো রুটের চেয়ে কম আয় করলেও বিরাট কোহলি পৃথিবীর সবচেয়ে বিত্তবান ক্রিকেটার। ম্যাচ ফির পাশাপাশি বিসিসিআই-এর লভ্যাংশ থেকেও অন্য ভারতীয় ক্রিকেটারদের মতো একটি অংশ পান তিনি। সব মিলিয়ে কোহলির চেয়ে বেশি আয় করা কোনো ক্রিকেটার নেই।

এই তিন দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকার কেন্দ্রীয় চুক্তি করে অস্ট্রেলিয়া। তাদের কেন্দ্রীয় চুক্তির সর্বনিম্ন মূল্য দুই লাখ ডলার। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সবচেয়ে কম আয় করা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বছরে দুই লাখ ডলার পান। সবচেয়ে বেশি যারা পান তাদের অঙ্কটা এক মিলিয়নের বেশি। অস্ট্রেলিয়া দুই ভাগে কেন্দ্রীয় চুক্তি করলেও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি হয় তিন ভাগে। সবচেয়ে কম দুই লাখ ৬৫ হাজার ডলার। মধ্যম স্তরের খেলোয়াড়রা পান পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ডলার এবং সবচেয়ে বেশি যারা পান, তাদের অঙ্কটা নয় লাখ ৯৫ হাজার ডলার। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এই দুই দেশের তুলনায় ভারতের অঙ্কটা সামান্য। ভারতের একজন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটার কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বছরে পান তিন লাখ ১২ হাজার ডলার। মধ্যম পর্যায়ের ক্রিকেটাররা পান এক লাখ ৫৬ হাজার ডলার। এবং সবচেয়ে কম যারা পান, তাদের অঙ্কটা ৭৮ হাজার ডলার।

এবার আসা যাক দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের আয়-রোজগারের খবরে। এই তিন দেশের সবচেয়ে বেশি আয় করা (কেন্দ্রীয় চুক্তি ও ম্যাচ ফি থেকে) ক্রিকেটার হলেন ফ্যাফ ডু প্লেসি (০.৪৪ মিলিয় ডলার), জেসন হোল্ডার (০.২৭ মিলিয়ন ডলার) ও কেন উইলিয়ামস (০.২৫)। এদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটাররা তিনটি ভিন্ন স্তরে ম্যাচ ফি পান। সর্বনিম্ন এক লাখ ৪৫ হাজার ডলার। মধ্যম পর্যায়ে দুই লাখ ২১ হাজার ডলার এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ ৬৩ হাজার ডলার। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাও তিনটি স্তরে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে আয় করেন। সেখানে সর্বনিম্ন এক লাখ ডলার, মধ্যম পর্যায়ে এক লাখ ২০ হাজার ডলার এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে এক লাখ ৪০ হাজার ডলার। নিউজিল্যান্ড এই অর্থ দেয় দুটি স্তরে। সর্বোচ্চ নিম্ন ৫৭ হাজার ডলার, সর্বোচ্চ এক লাখ ৪৪ হাজার ডলার।

টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে বাকি রইলো শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে এবং বাংলাদেশ। এই চার দেশের সবচেয়ে বেশি আয় করা (কেন্দ্রীয় চুক্তি ও ম্যাচ ফি থেকে) ক্রিকেটাররা হলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (০.৩২ মিলিয়ন), সরফরাজ আহমেদ (০.৩০ মিলিয়ন), সাকিব আল হাসান (০.১৪ মিলিয়ন) এবং গ্রায়েম ক্রেমার (০.০৯ মিলিয়ন)। গ্রায়েম ক্রেমার সাকিবের চেয়ে কম আয় করলেও, কেন্দ্রীয় চুক্তি এবং ম্যাচ ফি থেকে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা আয় করেন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চেয়ে বেশি! এমন কি এখনো টেস্ট খেলতে শুরু না করা আইরিশ ক্রিকেটারদের আয়ও বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চেয়ে বেশি!

যাই হোক, এবার এই চার দেশের ক্রিকেটারদের কেন্দ্রীয় চুক্তির আয় দেখে নেয়া যাক। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা দুটি স্তরে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আয় করেন। সর্বনিম্ন ৩০ হাজার ডলার, সর্বোচ্চ এক লাখ ২০ হাজার ডলার। পাকিস্তানও দুটি স্তরে কেন্দ্রীয় চুক্তির অর্থ দেয়। সর্বনিম্ন ২০ হাজার ডলার এবং সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ডলার। জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় চুক্তি করে তিনটি স্তরে। সর্বনিম্ন স্তরে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা পান ৩৬ হাজার ডলার। সেখানে বাংলাদেশে ক্রিকেটাররা পান ১৫ হাজার ডলার। মধ্যম স্তরে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা আয় করেন ৪৮ হাজার ডলার, আর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ৩০ হাজার ডলার। সর্বোচ্চ স্তরে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা পান ৬৬ হাজার ডলার, বাংলাদেশে ক্রিকেটাররা ৬০ হাজার ডলার। অর্থাৎ টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে তো বটেই, এখনো টেস্ট খেলতে শুরু না করা আয়ারল্যান্ডের (তারা একটি স্তরেই ৭৫ হাজার ডলার) ক্রিকেটারদের চেয়েও কম আয় করেন অনেকের ভাষায় ‘দেশের টাকা খেয়ে খেয়ে গোল্লায় যাওয়া’ সাকিব আল হাসানরা।

চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশ দলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতন এবং ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়েছে। তারপরও তাদের মোট আয় জিম্বাবুয়ে এবং আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটারদের চেয়ে কম। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বর্তমানে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি আয় করছে। কিন্তু সেই আয়ের মাত্র কয়েক শতাংশ যাবে এই আয়ের জন্য যাদের সবচেয়ে বেশি অবদান সেই মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের অ্যাকাউন্টে। বিশ্বের পাঁচটি দেশে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতের ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফি এবং কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে বোর্ডের মূল বাণিজ্যিক আয়ের একটা লভ্যাংশ পান। সেই অঙ্ক যে কত বড় তা হিসাব না করেও বলে দেয়া যায়।

লেখাটা শুরু হয়েছিলো সাকিবরা টাকার পাহাড় গড়ছেন নাকি বঞ্চিত হচ্ছেন- এই প্রশ্ন তুলে। উত্তর কী হতে পারে, লেখার শেষে এসে নিশ্চয়ই পাঠক বুঝতে পেরেছেন। রাইজিং বিডি