চীনের সীমান্তবর্তী শহর ডাংডং ছেড়ে চলে যাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার কর্মীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পিয়ংইয়ংয়ের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সক্ষমতা হ্রাসে জাতিসংঘের সাম্প্রতিকতম নিষেধাজ্ঞার কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। খবর রয়টার্স।
মার্কিন সরকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার প্রায় এক লাখ কর্মী বিদেশে কাজ করছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই চীন ও রাশিয়ায় কর্মরত। এসব শ্রমিকের পাঠানো বার্ষিক প্রায় ৫০ কোটি ডলার উত্তর কোরীয় সরকারের অর্থায়নের অন্যতম উৎস। পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে চীনের সীমান্তবর্তী শহর ডাংডংয়ে অনেক রেস্টুরেন্ট ও হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে উত্তর কোরিয়া থেকে আসা ওয়েটার ও মিউজিশিয়ানরা কাজ করেন; যাদের নাচ ও গান পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ডাংডংয়ের বিভিন্ন গার্মেন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস কারখানাগুলোতে উত্তর কোরিয়া থেকে আসা হাজার হাজার নারী শ্রমিক কাজ করেন। এসব কর্মীর উপার্জিত অর্থের সিংহভাগই সরাসরি উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যায়।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার পর দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ওয়েটাররা দেশে ফিরে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার জানান, সরকারের নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সুবিধাজনক হবে না।
চীনের সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক ভিডিওতে দেখা গেছে, ডাংডংয়ের বর্ডার গেটে উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার নারী দেশে ফেরার অনুমতি পেতে অপেক্ষা করছেন। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, শুক্রবার সকালে সীমান্ত পারাপারের জন্য ৫০ জন উত্তর কোরিয়ার নারী অপেক্ষা করছেন।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করে এমন চার ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এই ব্যবসায়ীরা আকরিক লোহা, সামুদ্রিক খাবার থেকে শুরু করে জিনসেং ও অ্যালকোহলের মতো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন। এছাড়া কাস্টমসে তল্লাশি ও সীমান্তে চীনা পুলিশদের টহল বেড়ে যাওয়াতে সীমান্তে পণ্য চোরাচালানও রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় সীমান্ত বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল ডাংডংয়ের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে।
গত মাসে পিয়ংইয়ংয়ের ষষ্ঠ ও বৃহত্তম পরমাণু পরীক্ষার জের ধরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার কর্মীদের কাজে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকরা তাদের চুক্তির মেয়াদ থাকা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন। তবে নতুন করে চুক্তি নবায়ন বা নতুন ভিসা ইস্যু করা হবে না।