প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা বলে দিলেন, এটা নজিরবিহীন। মানুষ অসুস্থও হতে পারবে না? এর আগে যেহেতু কেউ হয়নি এখনও হতে পারবে না? এ রকম কথা যদি ওনারা বলে থাকেন, ওনাদের অবাস্তব কথার জবাব দেয়ার জন্য আমি এখানে বসিনি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি তার পত্রে লিখেছেন তিনি ক্যান্সার ও নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেগুলো সম্পূর্ণ সারেনি। ওনার বিশ্রামের প্রয়োজন। সেজন্য উনি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। এখন নিয়মটা কী, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার পর মাননীয় প্রধান বিচারপতি নিজের ছুটি নিজে নেন। এটা কারও কাছ থেকে অ্যাপ্রুভ করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেহেতু তিনি ছুটিতে যাবেন, ছুটিতে থাকাকালীন আরেকজন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন। সে কারণে তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তার ছুটির ব্যাপারে অবগত করেন।’
‘রাষ্ট্রপতির কাছে যে পত্র দেয়া হয় সেটা আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রসেস হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে রাষ্ট্রপতির দফতরে যায়। সেক্ষেত্রে তিনি আমাদের অবহিত করেছেন। সেই পত্রে বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রধান বিচারপতি যখন অসুস্থতা বা অন্য কারণে তার কাজ করতে অসামর্থ্য হন তখন প্রবীণতম বিচারপতি তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব অস্থায়ীভাবে পালন করেন। সেক্ষেত্রে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা হচ্ছেন প্রবীণতম বিচারপতি। সেই প্রবীণতম বিচারপতিকে অস্থায়ীভাবে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এটা তো স্বাভাবিক জিনিস, আইনানুগ জিনিস। এটা নিয়ে তো স্পেকুলেশন করার তো প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, স্পেকুলেশন (জল্পনা) ওনারা কেন করছেন তা আমি একটু স্পেকুলেট করি। ওনারা স্পেকুশেলন করছেন এ কারণে আমার মনে হয় ওনারা কিছু একটা ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছিলেন। গণতন্ত্রের ধাবাবাহিকতা নসাৎ করার একটা চেষ্টা করছিলেন। সেই চেষ্টায় সফল হবেন না। এজন্য ওনারা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। ওনাদের অমূলক স্পেকুলেশনের জবাব আমাদের দেয়ার দরকার নেই।’
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি আমাদের জানিয়েছেন, আমরা প্রধান বিচারপতিকে বিশ্বাস করি। তিনি বলেছেন, তিনি অসুস্থ, এর ওপর আমি কোনো প্রশ্ন করতে রাজি না। তিনি আমাদের যেভাবে বলেছেন… ঠিক সেইভাবে… যেহেতু সুপ্রিম কোর্টটা চলতে হবে এবং সংবিধানে যে প্রভিশন আছে সেই প্রভিশন অনুযায়ী একজন অ্যাকটিং চিফ জাস্টিস থাকবেন। চাপের মুখে প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেছেন- ওনাদের এই বক্তব্য ভিত্তিহীন। এটার কোনো প্রমাণ নেই।
‘ইউসলেস (অনর্থক) কথাবার্তার জবাব আমাদের দেয়ার প্রয়োজন নেই। আপনারা বলছিলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবেন, ষোড়শ সংশোধনীর সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনারা তো রায়ের সমালোচনা করেছেন- এখনও করছেন। তাই বলা হচ্ছে চাপ প্রয়োগ করে, কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।’
‘শোনেন পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর সমালোচনা করা আমাদের অধিকার। সংক্ষুব্ধ পার্টি হিসেবে আমরা কী ব্যবস্থা নেব, সংসদে সেটা প্রস্তাব আকারে পাস হয়েছে। সেই কারণে আমরা আইনি পদক্ষেপ অবশ্যই নেব। এর সঙ্গে প্রধান বিচারপতির অসুস্থতার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটার সঙ্গে কেউ যদি কানেক্ট করতে চান, আমি বলব তাদের দুরভিসন্ধি আছে। এক মাসের ছুটি শেষে তো প্রধান বিচারপতি আবার ফিরে আসবেন- আমি আশা করি এবং আমি দোয়াও করি।’
কবে নাগাদ রিভিউ করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যবেক্ষণ চলছে। আমরা রিভিউ করব। কিন্তু আমরা জাজমেন্ট নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রিভিউ দাখিল করব। এর কারণ এটা ৭৯৯ পৃষ্ঠার একটা জাজমেন্ট। এটা রিভিউ করা একদিনের ব্যাপার নয়।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি ছুটি সংক্রান্ত একটি চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান। সেখানে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির ছুটির সময়ে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।