মিয়ানমারের রাখাইনে একটি গণকবরে হিন্দু নারী ও শিশুসহ ৪৫টি মরদেহ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বা বিশ্লেষকরা এমন হিন্দু গণকবরের বিষয়টিতে নিশ্চিত হতে পারেনি বা উপযুক্ত কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই ‘উড়ো খবর’ প্রচারের পর ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি কমতে শুরু করেছে দেশটির রোহিঙ্গােদের পক্ষের লবিস্ট ও ভারতীয় বিরোধী দলগুলোর।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ‘রোহিঙ্গা সশস্ত্র হামলাকারিরা অন্তত একশজনকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এছাড়া এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। যারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে বাঁচতে পেরেছে তাদের একটি দল ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।’
ভারতের একাধিক ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যম মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে হিন্দু গণকবর পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে। তারা দাবি করেছে, ‘গণকবরে নিহতরা রোহিঙ্গা সশস্ত্র জঙ্গিদের হামলার শিকার। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে যারা মিয়ানমারের পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে তারাই এ হিন্দুদের হত্যা করেছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের সমর্থন পেতেই মিয়ানমার হিন্দু গণকবর সন্ধানের নাটক সাজিয়েছে। তবে ঘটনা সত্য কিংবা মিথ্যা হোক, খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রচারণা আরও জোরদার হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল নেতা আসাদউদ্দিন ওআইসি’র মতো নেতা এবং কিছু মানবধিকার সংগঠন রোহিঙ্গাদের পক্ষে তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং অন্যান্য নেতারা বলছেন, ‘রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই বসতি স্থাপনের অনুমতি দেয়া না হলেও তাদের হত্যা বা হয়রানি করা হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তার জন্য স্পষ্টতই বিপদজনক। ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র অন্তর্ঘাত, চরমপন্থী হামলা ও বিস্ফোরণের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে।’
এতো বিরোধের মধ্যেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মানবাধিকার কর্মীরা। সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে এটি শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। হিন্দুদের গণকবর সন্ধানের কথিত খবরে রোহিঙ্গাপন্থী লবিস্টদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে । এদিকে হিন্দুদের ‘কথিত’ এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে নিন্দা জানানোর বাইরে কোনও মন্তব্য করেনি তৃণমূল কংগ্রেস, আসাদউদ্দিন ওআইসি বা দেশটির অন্য কোনও মানবিকার সংগঠন।
কলকাতার একজন মানবাধিকারকর্মী বলেছেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হিন্দুদের গণকবরের সন্ধানের খবর প্রকাশের পর ভারতে ডানপন্থীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একেবারে যথাযথ সময় চলছে। তবে এটা খুবই স্বাভাবিক, মিয়ানমার তাদের সব ব্যাপারেই তাদের অরক্ষিত, নেতৃত্বশূন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দোষারোপ করবে।’ এই বক্তব্যে মাধ্যমে তিনি মূলত হিন্দু গণকবর সন্ধানের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।