Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

angelicaগান গাইছেন ৯ বছরের অ্যাঞ্জেলিকা হেল। তার সুরের মূর্ছনায় উপ‌স্থিত স্রোতা, টিভির সামনে বসা দর্শকরা দোল খা‌চ্ছিলেন! আমেরিকা গট ট্যালেন্ট অনুষ্ঠানের অডিশনে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গায়িকা আন্দ্রে ডে’র বিখ্যাত গান রাইস আপ গান গাওয়ার পর বিচারকরা অবাক! চোখে-মুখে বিস্ময়। দাঁড়িয়ে গেলেন অ্যাঞ্জেলিকাকে অভিনন্দন জানাতে ।

অনুষ্ঠানের বিচারক ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গীতশিল্পী মেল বি বললেন, ‘তুমি খুব বিশেষ একজন। তোমার কন্ঠ দারুণ। তোমার কন্ঠ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।’ আরেক বিচারক ও অ্যামেরিকা গট ট্যালেন্ট অনুষ্ঠানের প্রযোজক সায়মন সরাসরি বললেন, ‘এটা হওয়ার কথা না। তোমার ‘‘চিকন’’ কন্ঠ যে এতটা জোরাল তা বোঝা যাচ্ছিল না। আমার মনে হচ্ছে আমরা ভবিষ্যতের একজন স্টারকে পেয়ে গেছি।’

chardike-ad

চার বিচারকের কাছ থেকে ‘ইয়েস কার্ড’ পেয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লিখান অ্যাটলান্টা জর্জিয়ার ক্ষুদে জাদুকর। এরপর কি হয়েছিল তা পরে বলছি। কিন্তু এ অডিশনের আগে অ্যাঞ্জেলিকা হেলের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো জানা দরকার।

জর্জিয়ায় অ্যাঞ্জেলিকা হেলের জন্ম। বাবা জেমস হেল আধা ফিলিপিনো অর্ধ কোকিসিয়াস। মা ইভা বোলান্ডো ফিলিপিনের। দুজনের প্রথম সন্তান অ্যাঞ্জেলিকা হেল। বাবা-মায়ের আদরে বড় হতে থাকা অ্যাঞ্জেলিকা রেডিওতে গান শুনে শুনে গানের প্রেমে পড়েন। তিন বছর বয়স থেকেই গুনগুন করে গান গাইতেন। বাবা-মা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন মেয়েকে বড় করে সঙ্গীত শিল্পী বানাবেন।

angelicaসবকিছু ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু অ্যাঞ্জেলিকার চার বছর বয়সে ঘন ঘন জ্বর আসতো এবং ঠান্ডা লেগে থাকত। বাবা-মা পুচকে অ্যাঞ্জেলিকাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে জানতে পারে, অ্যাঞ্জেলিকার শরীরে একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়া সংক্রামিত করে। পাশাপাশি তার ডান ফুসফুস ও কিডনি ‘সফ্ট’ হয়ে আসছিল। বাবা-মা মেয়েকে বাঁচানোর আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে আটলান্টা চিলড্রেন হেলথ কেয়ারে মোট ৮০ দিন ব্যয় করার পরে সুস্থ হন অ্যাঞ্জেলিকা। মা ইভা মেয়েকে বাঁচাতে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছিলেন।

সুস্থ হওয়ার পর গানে মনোনিবেশ করেন অ্যাঞ্জেলিকা। গানের প্রাথমিক ক্লাস করেন জর্জিয়ায় ট্রিসিয়া গ্রের কাছে। তার প্রতিভা দ্রুতই বিকশিত হতে থাকে। স্থানীয় বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার হয়ে গান গাইতে শুরু করেন অ্যাঞ্জেলিকা। চার বছরে অ্যাঞ্জেলিকা খুঁজে পান নিজেকে। বাবা-মার ইচ্ছায় আমেরিকা গট ট্যালেন্টের ১২তম আসরে নাম লিখায় অ্যাঞ্জেলিকা। পরের গল্পটা পুরোটাই সাফল্যের। মনে হবে বিধাতা নিজ হাতে পাল্টে দিয়েছে অ্যাঞ্জেলিকা হেলের জীবন।

অডিশন রাউন্ডের পর চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার জন্য আরেকটি রাউন্ড থাকে। সেখানে চার বিচারকের সঙ্গে যুক্ত হন অতিথি বিচারক। পাঁচ বিচারকের সিদ্ধান্তে লাইভ অনুষ্ঠানের টিকেট পান অংশগ্রহণকারীরা। আমেরিকা গট ট্যালেন্টের একটি নিয়ম হচ্ছে এখানে একটি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা হয় না। সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে ড্যান্সার, কমেডিয়ান, ম্যাজিশিয়ান এবং অন্যান্য প্রতিভাবানদের প্রতিযোগিতা হয়।

angelicaলাইভ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে দ্বিতীয় রাউন্ডে অ্যালিসা কিসের গার্লস অন ফায়ার গানটি গান অ্যাঞ্জেলিকা হেল। সেদিন অতিথি বিচারক হয়ে এসেছিলেন আমেরিকার স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান, গায়ক, উপস্থাপক ক্রিস হার্ডউইক। অ্যাঞ্জেলিকার গান তার এতটাই ভালো লেগেছিল যে ‘গোল্ডেন বেজার’ বাটন চাপতেও দ্বিতীয়বার চিন্তা করেননি হার্ডউইক।

লাইভ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগেই অ্যাঞ্জেলিকা তারকা। তার প্রথম দুটি গান ইউটিউবে ঝড় তুলে। লাইভ অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপ কোয়ার্টার ফাইনাল। সেখানে সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে সব থেকে বেশি ভোট পেয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ৯ বছর বয়সি অ্যাঞ্জেলিকা। কোয়ার্টারে জেডের ক্ল্যারিটি এবং সেমিফাইনালে ডেভিড গোয়েটার উইথআউট ইউ গানটি গান অ্যাঞ্জেলিকা। প্রতিটি রাউন্ডে সেরাদের কাতারে থেকে ফাইনালে ওঠেন এই শিল্পী জাদুকর।

ফাইনালে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ১০জন। সবাইকে ছাপিয়ে অ্যাঞ্জেলিকা উঠে আসেন সেরা দুইয়ে। রেকর্ড ভোট পেয়ে অ্যাঞ্জেলিকার সঙ্গে দুইয়ে আসেন ডার্সি লিন ফার্মার। ডার্সি ছিলেন ভেন্টট্রিলোকুইস্ট। ফাইনালে ক্লিন ব্যানডিটের সিম্ফনি গানটি গেয়ে মানুষকে কাঁদিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলিকা। কিন্তু ভোটের খেলায় তাকে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আমেরিকা গট ট্যালেন্টের ১২তম আসরে শিরোপা জিতে ডার্সি লিন।

angelicaরানার্স আপ হলেও পুরো আমেরিকার মন জয় করেছিলেন অ্যাঞ্জেলিকা। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী ভোট সংখ্যা কখনই প্রকাশ করা হয়না। তবে ফাইনালের মঞ্চে উপস্থাপিকা টায়রা ব্যাংকস জানান, আমেরিকা গট ট্যালেন্টের এবারের বিজয়ীকে বেছে নিয়ে পুরো আমেরিকা দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে দুই সেরার।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোহনীয় সুরের মূর্ছনায় শ্রোতাদের মুগ্ধ করে আমেরিকার সেরা গায়িকা হয়েছেন অ্যাঞ্জেলিকা হেল। কন্ঠে তার সুরের মায়াবী যাদু। গান গেয়ে খুব সহজে মানুষের হৃদয়-মন জয় করে নিয়েছেন। কীর্তিমানদের গল্পগুলো প্রায় এমনই। খারাপ সময় কাটানোর পর পুরো পৃথিবীকে নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন তারা। অ্যাঞ্জেলিকা হেলও ব্যতিক্রম নন।

তাইতো অডিশনের দিন বিচারকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি এখানে এসেছি জিততে, জিতেই যাব।’ অ্যাঞ্জেলিকা হয়ত সেরার মুকুট পাননি কিন্তু পুরো আমেরিকাকে নিজের পাশে পেয়েছেন। বড় হয়ে কি হতে চান অ্যাঞ্জেলিকা হেল। সোজাসাপ্টা উত্তর,‘আই ইউল বি উইটনি হিউস্টন। আই ইউল বি এ সুপারস্টার।’