দুর্নীতির অভিযোগের মুখে গত বছর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই। দক্ষিণ কোরিয়া দুর্নীতির বিষয়কে ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারলেও এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য নয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও মালয়েশিয়ার এমডিবি-১ তহবিল কেলেঙ্কারি ছাড়াও এশিয়ার অনেক দেশই দুর্নীতির কালিমা এড়াতে পারেনি। এর গভীরতা কতটুকু খতিয়ে দেখতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দেড় বছর ধরে জরিপ চালিয়েছে।
সম্প্রতি ফোর্বসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, টিআই তাদের জরিপে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১৬টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২০ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলে। এসব মানুষের প্রতি চারজনের একজন সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে ঘুষ দিয়েছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। কোন কোন দেশে এ চিত্র আরো ভয়াবহ। দুর্নীতি সেসব দেশের প্রত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে পড়েছে, এমন চিত্র জরিপে উঠে এসেছে। দুর্নীতিতে শীর্ষ পাঁচে ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের নাম থাকলেও নেই বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী এশিয়ার মোট পাঁচটি সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও এক নম্বরে ভারত।
নিচে এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ৫ দেশের দুনীতির চিত্র তুলে ধরা হলো:
শীর্ষে ভারত, ঘুষের হার ৬৯ শতাংশ: জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেক ভারতীয়ই জানিয়েছেন, স্কুল, হাসপাতাল, জাতীয় পরিচয়পত্র, পুলিশসহ প্রতি ছয়টি সরকারি সেবা পেতে পাঁচটিতেই ঘুষ দিতে হয়েছে তাদের। যদিও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘যুদ্ধের’ ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ৫২ শতাংশ ভারতীয় মনে করছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার ভালো বা অনেক ভালো করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ভারতীয়দের মনোবলও বৃদ্ধি করেছে। ৬২ শতাংশ ভারতীয় মনে করছেন, সাধারণ মানুষই পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
ঘুষের হার ৬৫ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় ভিয়েতনাম: ভিয়েতনামের মানুষ দুর্নীতিকে দেখছেন মহামারী হিসেবে। যে ১৬টি দেশে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জরিপ চালিয়েছে, তাদের মধ্যে ভিয়েতনামের মানুষই দুর্নীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি হতাশাসূচক মতামত দিয়েছেন। ৬০ শতাংশ ভিয়েতনামিজই মনে করেন, দুর্নীতি ঠেকাতে তাদের সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা একেবারেই দুর্বল।
তৃতীয় থাইল্যান্ড, ঘুষের হার ৪১ শতাংশ: সরকারি দফতরসহ প্রায় সব পর্যায়েই দুর্নীতি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে থাইল্যান্ড। তবে দেশটির বেশিরভাগ মানুষই বেশ আশাবাদী। মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ মনে করছেন গত ১২ মাসে দুর্নীতি বেড়েছে। ৭১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন দুর্নীতি ঠেকাতে বর্তমান সেনাশাসিত সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা যথার্থ।
চতুর্থ অবস্থানে পাকিস্তান, ঘুষের হার ৪০ শতাংশ: জরিপে অংশ নেওয়া পাকিস্তানের তিন চতুর্থাংশ মানুষই মনে করছে দেশটির অধিকাংশ বা সব পুলিশই দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই পুলিশের কাছে বা আদালতে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। এ অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে বলেও মনে হচ্ছে না পাকিস্তানিদের। তবে তিনভাগের একভাগ মানুষ মনে করছে জনগণই এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে।
পাঁচ নম্বরে মিয়ানমার, ঘুষের হার ৪০ শতাংশ: ২০১৩ সালে মিয়ানমারে দুর্নীতিবিরোধী এক আইন পাশ হওয়া সত্বেও জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, মিয়ানমারের প্রায় সব পুলিশই দুর্নীতিগ্রস্ত। ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করেন দেশটির বিচার বিভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত। তবে এক চতুর্থাংশ মানুষ মনে করছেন, গত বছরের চেয়ে দুর্নীতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে দেশটিতে।