rana১৮ বছরের টগবগে যুবক রানা বাবু। সব সময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। মুখে লেগেই থাকে এক ফালি হাসি। দিনমজুর পরিবারের একমাত্র ছেলে। পরিবারের নিত্যসঙ্গী দুঃখ দুর্দশা আর অভাব অনটন তার ভালো লাগত না।

তাই ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন বড় হলে ধরবে সংসারের হাল। বাবা-মায়ের দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু কীভাবে? অভাবের কারণে পড়াশোনার গন্ডি প্রাইমারিও পেরোয়নি সে। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাবার কাছে বায়না ধরে বিদেশ যাওয়ার। কিন্তু তাকে বিদেশ পাঠানোর খরচ দিনমজুর বাবা আলম হোসেনের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ পরিবারের এমন কোনো সম্পদ নেই যা বিক্রি করে পাসপোর্ট ভিসার খরচ মেটানো সম্ভব।

chardike-ad

তবুও ছেলের বায়নার কাছে হার মানতে হয় বাবাকে। অগত্যা এর-ওর কাছ থেকে ধার-দেনা ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিন লাখ টাকায় শ্রমিক ভিসায় তাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে পাঠানো হয়।

তবে এই বিদেশ যাত্রাই যে তার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে তা কে জানত? যে ছেলের স্বপ্ন ছিল বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে আজ সেই ছেলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মৃত্যুপথযাত্রী।

ওমান যাওয়ার মাস খানেকের মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। গত ৯ মে, ওমানে যাওয়ার পর কাজ পায় দ্য আবারদা কোম্পানিতে। কাজ করত নিঝুয়া এলাকায়। সেখানে কর্তব্যরত অবস্থায় একটি বড় ট্রাক পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে মাথা ও বুকে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয় সে।

এ অবস্থায় দুই মাসের বেশি মাস্কাটের কৌলা হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকার পর সপ্তাহ খানিক আগে তাকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়। তার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দরকার।

গত রমজানের ঈদে সবাই যখন খুশি, ঠিক সেই মুহূর্তে দুর্ঘটনার খবরটি আসে তার পরিবারের কাছে। এদিকে রানার চিকিৎসার বিষয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তার বাবা-মা। তার যথাযথ চিকিৎসার জন্য ওমান দূতাবাস, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

রানা বাবুর চিকিৎসার বিষয়ে ওমান দূতাবাসের দ্বিতীয় সেক্রেটারি (লেবার) মো. আনোয়ার হোসাইন একাধিক ই-মেইল বার্তায় জানিয়েছেন, রানা বাবুর শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। হাসপাতালে তার চিকিৎসা যথাযথভাবেই হচ্ছে। চিকিৎসার খরচ খুবই ব্যয়বহুল। হাসপাতাল ও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। পুরোপুরি সুস্থ হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

রানা বাবুর এই চরম সংকটময় মুহূর্তে দূতাবাসকে সবসময় পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে তার দরিদ্র বাবা-মা। পরিবার পরিজন থেকে অনেক দূরে থাকা ছেলের সব ভালোমন্দের বিষয়ে দূতাবাসই একমাত্র ভরসা বলে জানিয়েছেন তারা।