বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়া শুরু করেছে জাপান। তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী ১৭ জনের প্রথম ব্যাচটি বুধবার জাপান যাচ্ছেন। আইএম জাপানের সহযোগিতায় বিএমইটির মাধ্যমে জাপানগামী টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মঙ্গলবার প্রাক-বহির্গমন ব্রিফিং করা হয়।
ব্রিফিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, আজ যারা জাপান যাচ্ছেন- তাদের কাজের ওপর নির্ভর করছে আগামীতে বাংলাদেশ থেকে জাপান কি পরিমাণ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়োগ করবে। জাপানের মতো দেশে আমাদের বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই বাজারটি দীর্ঘ হবে এটাই আমাদের কাম্য। মনে রাখতে হবে, জাপান আমাদের অকৃত্তিম বন্ধু। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক ও দক্ষতা উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা দীর্ঘদিনের। আইএম জাপানের সহযোগিতায় বিএমইটির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন গ্রহণের জন্য জাপান সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান তিনি। টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, তোমাদের সাফল্য বাংলাদেশ থেকে জাপানে বেশি বেশি প্রশিক্ষণার্থী প্রেরণের পথকে সুগম করবে। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশী যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন ঘটবে, যা দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী, দক্ষ ব্যবস্থাপকের চাহিদা মেটাবে। তিনি আরও বলেন, বিনা খরচে জাপান গমনের এ সুযোগ গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন তথা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে মর্মে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এ প্রশিক্ষণ ও এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে আপনারা যারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাদের সকলকে মন্ত্রী আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ব্রিফিং অনুষ্ঠানে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ সেলিম রেজার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার, অতিরিক্ত সচিব (অর্থ ও প্রশাসন) জাবেদ আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (কল্যাণ ও মিশন) মোহাম্মদ আজহারুল হক, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ সেলিম রেজা, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরণ কুমার চক্রবর্তী, যুগ্মসচিব (প্রশিক্ষণ) মোঃ সুজায়েত উল্যাসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা ও প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএমইটির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. নুরুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সচিব স্বল্প সময়ের মধ্যে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন প্রেরণে আইএম জাপান ও বিএমইটির কার্যক্রমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। আইএম জাপানের প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (আইএম জাপান) সহযোগিতায় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন প্রেরণের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইএম জাপানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছিল এ বছরের মার্চে। তারই ধারাবাহিকতায় খুব কম সময়ের মধ্যে জাপানে প্রথম ব্যাচ যেতে পারছেন। জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন প্রেরণ সংক্রান্ত বিষয়ে টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের কোন অভিবাসন ব্যয় বহন করতে হবে না। তারা বিনা খরচে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এমনকি তাদের বিমান ভাড়াও প্রদান করতে হবে না। আইএম জাপান তাদের বিমান ভাড়া বহন করবে। স্বাক্ষরিত এমওইউ অনুযায়ী প্রথম ব্যাচে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন প্রেরণের লক্ষ্যে জাপানের কনস্ট্রাকশন কোম্পানিসমূহের চাহিদার ভিত্তিতে ১৭ জনকে নির্বাচিত করে জাপানী ভাষা, সংস্কৃতি এবং শারীরিক শিক্ষার ওপর তাদের বিএমইটির অধীন বাংলাদেশ জার্মান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গত ২৩ এপ্রিল থেকে ৪ মাস মেয়াদী প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং প্রদান করা হয়।
বিএমইটি জানিয়েছে, আইএম জাপান বিদেশে চাকরি প্রাপ্তির লক্ষ্যে বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধনকৃতদের মধ্যে থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রাথমিক অবস্থায় ৫০ জনকে নির্বাচিত করা হয়। পরে তাদের গণিত ও জাপানী বর্ণমালা পরীক্ষা এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে আইএম জাপানের প্রতিনিধিগণ প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিংয়ের জন্য চূড়ান্তভাবে ১৭ জন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নির্বাচিত করেন। প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং সম্পন্নকারী ১৭ জনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০ জন আজ জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে ৩ বছরের চুক্তিতে যাচ্ছেন। বাকি ৭ জন আগামী অক্টোবরে জাপান গমন করবেন। টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের কর্মক্ষেত্রে সফলতা ও কোম্পানির চাহিদার ভিত্তিতে এ চুক্তি আরও ২ বছরের জন্য নবায়ন হতে পারে। জাপানের কোম্পানিসমূহের চাহিদার ভিত্তিতে ২য় ব্যাচে আরও ৩০ জন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন প্রেরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের প্রি-ডিপার্চার ট্রেনিং অক্টোবরে শুরু হবে। জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন প্রেরণ সংক্রান্ত এ প্রক্রিয়া জাপানের কোম্পানিসমূহের চাহিদার ভিত্তিতে অব্যাহতভাবে চলমান থাকবে।
জাপানে কোম্পানি ভেদে টেকনিক্যাল ইন্টার্নগণ মাসিক ৬৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এর বাইরে অতিরিক্ত কাজের জন্য তারা আলাদাভাবে ভাতা প্রাপ্য হবেন। ৩ বছর শিক্ষানবিসি প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্তির পর টেকনিক্যাল ইন্টার্নগণকে দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থানসহ নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য সংশ্লিষ্ট জাপানের কোম্পানি ৪ লাখ টাকা করে দেবে। ৫ বছর শিক্ষানবিসি প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্নকারীগণকে কোম্পানি ৬ লাখ টাকা করে প্রদান করবে। টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিসমূহ নিয়োগকৃত কোম্পানি থেকে পলায়ন করে অন্য কোন কোম্পানিতে যোগদান না করা, সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া যাবে না। টেকনিক্যাল ইন্টার্নগণ জাপানের আইন যথাযথভাবে মেনে প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরলে তাদের জন্য আইএম জাপান দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। প্রথম ব্যাচের ওপর নির্ভর করছে, জাপান আরো কত সংখ্যক টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নেবে।
বাংলাদেশ থেকে আইটি কর্মী নেবে জাপান
সুযোগ আছে জাপানে