অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম ও অভিবাসন বিরোধী রাজনীতিবিদ পলিন হ্যানসন বৃহস্পতিবার সিনেটে বোরকা পরে হাজির হয়েছেন৷ হ্যানসন বোরকা পরে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে এই পোশাক নিরাপত্তার জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করে৷ সিনেটে ঢুকে তিনি এই পোশাক খুলে ফেলেন৷ তাঁর মতে, এই পোশাক জঙ্গিবাদের বিস্তারে ভুমিকা রাখতে পারে৷ ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে বোরকা কি নিষিদ্ধ করা উচিত নয়?”
অবশ্য মুসলিমদের বিদ্রুপ করা তাঁর এই কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি সিনেটে তিরস্কারের মুখোমুখি হয়েছেন৷ দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল জর্জ ব্র্যান্ডিস তাঁর এই উস্কানিমূলক আচরণের কারণ জানতে চাইলে হ্যানসন এই প্রশ্ন তোলেন৷ ‘‘জঙ্গিবাদ এখন আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় হুমকি৷ অনেক নাগরিকই বিষয়টি নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত,” যোগ করেন তিনি৷
দেশটির সর্বোচ্চ আইনজীবী ব্র্যান্ডিস জানান, তাঁর রক্ষণশীল সরকারের এমন কোন পরিকল্পনা নেই৷ মুসলিম না হয়েও বিদ্রুপ করে বোরকা পরার তাঁর এই আচরণ মুসলিমদের জন্য পীড়াদায়ক বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘একটা জনগোষ্ঠীকে বিদ্রুপ করা, তাঁদের এক ঘরে করে রাখা এবং তাঁদের পোশাক নিয়ে উপহাস করা খুবই মর্মান্তিক৷ এই কাজ আপনি কেন করলেন তার জবাব দিতে হবে,” বলেন ব্র্যান্ডিস৷
কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া ব্র্যান্ডিস এ-ও বলেন যে, ইসলামের কঠোর অনুশাসন যাঁরা মেনে চলেন, তাঁরা দেশের আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল৷ তিনি বলেন, ‘‘এদেশে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলিম অস্ট্রেলিয়ান আছেন৷ তাঁদের অধিকাংশই আইন মানেন এবং ভালো নাগরিক৷”
ব্র্যান্ডিসের বক্তব্যের পর তাঁর লেবার ও সবুজ দলের রাজনৈতিক বিরোধীরাও দাঁড়িয়ে করতালি দেন৷ এই ঘটনার পর সিনেটের অনেকেই হ্যানসনের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন৷
তাঁর এই ‘কাজ’-কে ‘বিরক্তিকর’ বলে মন্তব্য করেন স্বতন্ত্র সিনেটর ড্যারিন হিঞ্চ৷ স্কাই নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘পলিন হ্যানসন অস্ট্রেলিয়ার একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মকেই শুধু উপহাস করেননি, তিনি সিনেটের মতো একটি সম্মানিত প্রতিষ্ঠানেরও উপহাস করেছেন৷”
দলে দলে এশিয়ানদের আগমনে অস্ট্রেলিয়া বিপদে পড়ছে, এমন মন্তব্য করে নব্বই দশকের দিকে হ্যানসন প্রথম আলোচনায় আসেন৷ মাঝে প্রায় এক যুগ রাজনীতির বাইরে থেকে আবার ফেরেন ২০১৪ সালে৷ মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিতিও পান৷ দু’বছর পর অতি ডানপন্থি দল ওয়ান নেশন পার্টির প্রধান হয়ে সিনেটর নির্বাচিত হন৷
সিনেটে যোগ দিয়ে প্রথম ভাষণেই তিনি বলেন, ইসলাম এমন একটি সংস্কৃতি ও ধারণা, যা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই যায় না৷
হ্যানসন অবশ্য তাঁর এই কর্মকাণ্ডে মোটেই অনুতপ্ত নন, একটি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কাজটি কি খুব উগ্র কিছু হয়েছে? হ্যাঁ হয়েছে৷ আমার মনে হয় পরিষ্কার বার্তাই দিতে পেরেছি৷”