Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

kimযতই দিন যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া সংকট ততই গভীর হচ্ছে। গত মাসে দুই দফা আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর দেশটির ওপর এ যাবৎ কালের কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রবল বাগযুদ্ধে জড়িয়েছে পিয়ংইয়ং, যা সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতিকে উত্তেজনাময় করে তুলেছে। এমন এক অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়েও এক চুলও ছাড় দিতে রাজি নন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ামে এ মাসের মধ্যে হামলার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন তিনি। এ ধরনের হুমকি ও উসকানি দিয়ে কী হাসিল করতে চান কিম—এমন একটি প্রশ্ন সামনে রেখে গবেষণা সংস্থা চ্যাটাম হাউসের একটি প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশ করে বিবিসি।

প্রথম প্রশ্নটি আসে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ঠিক কী কী সুবিধা দিতে পারে? অর্থাৎ ‘দেওয়া-নেওয়ার’ মাধ্যমে এখনকার সংকটের সমাধান পাওয়া সম্ভব কিনা? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে তাঁর দেশের ‘প্রচণ্ড ক্রোধ’ দেখানোর হুমকি দিয়েছেন। জবাবে গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা বলেছে পিয়ংইয়ং। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে কূটনীতি উত্তেজনা কমাতে ঠিক কতটা কার্যকর হবে তা স্পষ্ট নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনসহ ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকেই এখনো কূটনীতির পক্ষে। অতীতে কিমের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ ট্রাম্পের মধ্যেও দেখা গেছে। তবে বিপরীত দিক থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। সম্প্রতি ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে টিলারসন ও উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং-হো’র মধ্যে সাক্ষাৎ হতে পারত, তবে হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং কিউং ওয়া কথা বলতে চেয়েছিলেন। তাও এড়িয়ে গেছেন হো। ফলে কূটনৈতিক শর্টকাট পথে এগিয়ে সমাধান আসবে এমন ভাবার সুযোগ নেই।

chardike-ad

তবে উত্তর কোরিয়াকে দেওয়ার মতো অনেক কিছুই যুক্তরাষ্ট্রের আছে। ঝুলে থাকা কোরীয় যুদ্ধের ইতি টানতে শান্তিচুক্তি সইয়ের ব্যবস্থা করতে পারে ওয়াশিংটন। দেশটিকে কূটনৈতিকভাবে (দপ্তর খোলার মাধ্যমে) স্বীকৃতি দেওয়া, ওই উপদ্বীপে প্রচলিত অস্ত্র কমাতে ব্যবস্থাও নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসবই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক চুক্তির অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। পিয়ংইয়ং প্রতিবারই চুক্তি ভেঙেছে। ফলে ওয়াশিংটনের মধ্যে আস্থার ঘাটতি কাজ করছে।

২০১১ সালের শেষ দিকে ক্ষমতায় আসার পর দুটি বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে নজর দেন কিম। প্রথমত, তাঁদের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে আরো উন্নত করা এবং দ্বিতীয়ত, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি শুরু হয়েছে ষাটের দশক থেকে। শুরু থেকেই বিষয়টির বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বৈরী দেশগুলো। পক্ষে ছিল না চীন ও রাশিয়ার মতো পরম বন্ধুরাও।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তর কোরিয়া ৬০টি পরমাণু অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে। দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে দেশটি। কিম এবং তাঁর পূর্বসূরিরা বারবারই দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে নিরাপত্তার হুমকি রয়েছে তাদের ওপর। এমনকি উত্তর কোরিয়ার নাম নিশানা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে—এমন প্রচারও দেশের মধ্যে তারা চালিয়ে আসছে। কোরীয় যুদ্ধে (১৯৫০-৫৩) যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ইতিহাস এখনো সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে তাজা হয়ে রয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের যে ২৮ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে তারা শুধু উত্তরকে আঘাত করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সেখানে আছে—তাও প্রচার করা হয় জোরেশোরে। ফলে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের বিষয়ে দেশের ভেতর জনসমর্থন রয়েছে। এই বিষয়টি দেশের ভেতরে কিমের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে বাগযুদ্ধ চলছে তা থেকে অন্তত কিমের সরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। সূত্র: বিবিসি