বাংলাদেশে গত ২০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যা হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দ্য ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট (ইসিএমডব্লিউএফ)।
ইসিএমডব্লিউএফ’র পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের ভারত ও বাংলাদেশ অংশে পানি বাড়বে। এছাড়া হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পানি বৃদ্ধি পাবে।
গত শুক্রবার থেকে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে পানি বাড়ছে এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এই পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হবে। গত ২০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উজানে বন্যার মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।
এদিকে আগামী সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে বলে শর্তক করেছে, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের (জেআরসি) বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতি (গ্লো-এফএএস)।
জেআরসির বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতির (গ্লো-এফএএস) গত ১০ আগস্টের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পুরো অববাহিকা এবং গঙ্গার ভাটিতে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের শিক্ষক গওহার নঈম ওয়ারা জানান, বর্তমানে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে ২১ আগস্ট অমাবস্যা। অপরদিকে আসামে বড় ধরনের বন্যা হচ্ছে। এই পানি নেমে আসতে তিন-চার দিন সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কিন্তু পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে ১৯ তারিখের মধ্যে এ সীমা অতিক্রম করতে পারে।’
ইতিমধ্যেই ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সঙ্গে রয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সুনামগঞ্জও। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, আত্রাই, সুরমাসহ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
এদিকে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটার ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে। সৈয়দপুরের খড়খড়িয়া নদীর শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। দিনাজপুরে জেলার শতাধিক পয়েন্ট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পুনর্ভবা ও আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নওগাঁয় বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী। মূল বাঁধও ঝুঁকির মুখে। জামালপুরে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপরে। লালমনিরহাটে লাখো মানুষ পানিবন্দী। সুরমার পানি বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।
এমন এমন পরিস্থিতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি নির্ভর করবে বৃষ্টিপাতের ওপর। ইতিমধ্যে পানি বৃদ্ধির পরিমাণ কমে আসছে। গত দুই দিনে যেখানে ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার বেড়েছিল, আজ সেখানে বেড়েছ ৪০ সেন্টিমিটার।
তিনি বলেন, ‘২০০ বছরের মধ্যে ভয়াবহ হবে কি না, তা বলার সময় আসেনি।’ যুগান্তর