সুলভ মূল্যে আরামদায়ক পোশাক খুঁজতে বাংলাদেশি পোশাকই অনেক মালয়েশিয়ানদের প্রথম পছন্দ। কাপড় কিনতে তাই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখাটাই গুরুত্ব পায় তাদের কাছে। রাজধানী কুয়ালালামপুরে পাইকারি বাজার হাংতুয়ায় প্রসারিত হওয়া পোশাক ব্যবসার বড় অংশ এখন বাংলাদেশিদের দখলে। গেল কয়েক দশকে এই বাজারে গড়ে উঠেছে প্রায় চার শ বাংলাদেশির দোকান ও শোরুম। বাংলাদেশ থেকে পোশাক এনে এখানে ব্যবসা করছেন এসব ব্যবসায়ীরা।
হাংতুয়ার এই পাইকারি বাজার থেকে ক্রয় করে মূলত গোটা মালয়েশিয়ায় কাপড়ের ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশি পণ্যের গুণগত মান উন্নত ও দামে সস্তা হওয়ায় লাভ বেশি থাকে খুচরা বিক্রেতাদের। অনেক মালয় ও চাইনিজ ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় তাই প্রথমেই থাকে বাংলাদেশি পণ্য। দেশটির নামীদামি সব বিপণিবিতানগুলোতে শোভা পায় বাংলাদেশি তৈরি পোশাক।
তবে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের মান কিছুটা কমলেও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা পরিশ্রম করে প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন। তা ছাড়া বাংলাদেশি দোকানগুলোর মালিক ও বিক্রয়কর্মীরা মালয় ভাষায় পারদর্শী হওয়ায় এবং তাদের সুন্দর ব্যবহারের কারণে ক্রেতারা সহজেই আকৃষ্ট হন। এখান থেকে কেনা পণ্য যাচ্ছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর, পূর্ব মালয়েশিয়ার সাবাহ, সারওয়াক এবং সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায়। এসব পণ্য বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সাভারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিয়ত কন্টেইনারে করে মালয়েশিয়ায় আসছে। হাংতুয়ায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন শো’রুম ও দোকান রয়েছে সাড়ে তিন শর বেশি। যাতে কাজ করছেন বাংলাদেশি ও মালয় নারী-পুরুষ কর্মীরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন ইন মালয়েশিয়ার নেতারা এই ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ গার্মেন্টস ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন ইন মালয়েশিয়ার (বিজিটিএএম) যাত্রা শুরু হয়েছে। মার্শাল পাভেলকে সভাপতি ও মুস্তাফিজ মুস্তাককে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসী পোশাক ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন। কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন মো. হোসেন ও মনিরুজ্জামান মনির। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল বারী, কোষাধ্যক্ষ মো. শাকিল, প্রচার সম্পাদক আবদুল বাতেন, উপ-প্রচার সম্পাদক কাজি তানভির আহমেদ ও রোমান আলম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সরকার ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতা পেলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেন, বাংলাদেশি পোশাক এখানকার অনেক মানুষের প্রথম পছন্দ। এই বাজারে আমরাই সেরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভিসাগত জটিলতার প্রভাব ব্যবসায় পড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যবসায়ী মার্শাল পাভেল বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে আমরা এখানে ব্যবসা করছি। সমন্বিতভাবে করতে পারলে এই শিল্প থেকে মোটা অঙ্কের টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব। তিনি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পকারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর নেতাদেরও এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, মালয়েশিয়া জুড়ে এখন মন্দা ভাব চলছে। এই মন্দার সময়েও তৈরি পোশাকের ব্যবসা ভালোই চলছে। তবে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার ফলে অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না। ভিসা সমস্যা সমাধানে তারা মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছেন।
মোস্তফা ইমরান: কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া