হলিউডের সেই বিখ্যাত পারফিউম সিনেমার কথা মনে আছে কি? এক খুনির গল্প? সুগন্ধি তৈরিতে এক বালকের অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টা আর মরিয়া হয়ে ওঠার গল্প? যে একের পর সুন্দরীদের হত্যা করে তাদের গায়ের গন্ধ থেকে তৈরি করল বিস্ময়কর এক সুগন্ধি!
সেই সুগন্ধি ব্যবসায়ই এবার অন্য এক নজির গড়লেন বাংলাদেশের মাহতাবুর রহমান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি গড়ে তুলেছেন হাজার কোটি টাকার এক সুগন্ধি ব্যবসায় সাম্রাজ্য। তার এই সুগন্ধি ব্যবসায় সাম্রাজ্য পরিচালনা করে যে কম্পানি তার নাম ‘আল হারামাইন পারফিউমস’। কম্পানিটি ইতিমধ্যেই বিশ্বসেরা সুগন্ধি ব্র্যান্ডগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। আইএসও সনদপ্রাপ্ত এই সুগন্ধি বর্তমানে বিশ্বের ৬৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে যার শোরুম রয়েছে ৮০টিরও বেশি।
ক্রেতাদের কথা মাথায় রেছে আতরের পাশাপাশি সুগন্ধিসহ নানা ধরনের প্রসাধনী প্রস্তুত করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ব মাতিয়ে সম্প্রতি দেশের বাজারেও নজর দিয়েছেন আল্ হারামাইন কোম্পানির কর্ণধার মাহতাবুর রহমান। এরই মধ্যে ঢাকায় তিনটি আউটলেট খুলেছে আল্ হারামাইন পারফিউমস্। মন মাতানো ঘ্রাণ ও বাহারি মোড়কে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোহনীয় এ সুগন্ধি।
কিভাবে এই ব্যবসায় এলেন জানতে চাইলে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান বলেন, শুরুটা হয়েছিল আমার বাবার হাত ধরে। আমার বাবার নাম মওলানা কাজী আবদুল হক। আমাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারের নাটেশ্বর গ্রামে। সিলেটের সুজানগরে আগর কাঠ হতো। ওই আগর কাঠ দিয়ে অনেক সুন্দর আতর হতো। কিন্তু বাংলাদেশে ওই আগর কাঠের বাজার ছিল না। ভারতসহ আশপাশের দেশগুলোতে আগর কাঠের বাজার ছিল। ১৯৫৬ সালে আমার বাবা যখন প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে যান হজ করতে, তখন তিনি সঙ্গে করে বেশ কিছু আগর কাঠ নিয়ে গিয়েছিলেন। সৌদি আরবের বাংলাদেশিদের কাছে আগরের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় আমার বাবা সেখানে সুগন্ধির ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পবিত্র মক্কা নগরী থেকে সুগন্ধির ব্যবসা শুরু করেন। আমি ১৯৭৫ সালে প্রথম বাবার সঙ্গে সৌদি আরবে যাই। তখন আমি কেবল উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিএ পরীক্ষা দিয়েছি।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মাহতাবুর রহমানকে। খুবই অল্প সময়ে সুগন্ধির ব্যবসায় দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) তিনি প্রথম শোরুম খোলেন ১৯৮১ সালে। পরবর্তী সময় ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার্থে দুবাইয়ে ১১ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর সুসজ্জিত প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন। ১৬ হাজার ২১৫ বর্গমিটারের জায়গার ওপর কারখানা স্থাপন করেন। কারখানাটিতে সর্বাধুনিক মানের সুগন্ধি প্রস্তুত করতে পূর্ণাঙ্গ ও সেমি অটোমেটিক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিত্যনতুন সুগন্ধি তৈরির জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ খুলেছেন। পরবর্তী সময় মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশে এই ব্যবসা প্রসার ঘটান তিনি।
মাহতাবুর রহমান বলেন, ‘গত বছর আমরা তিন হাজার ৬০০ কনটেইনার পণ্য রপ্তানি করেছি। এতো বড় ব্যবসা পরিচালনার জন্য আমরা কখনো দেশে-বিদেশের কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেইনি এবং ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার ইচ্ছা নেই।
তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে ছয় ভাই এই ব্যবসা দেখাশোনা করছি। ভাইদের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। এখন আমার ছেলে ও ভাতিজারা এই ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে। এটা পুরোপুরি আমাদের পারিবারিক ব্যবসা।
নতুন করে যেসব প্রবাসী বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে মাহতাবুর রহমান বলেন, ‘আমি দুবাইতে বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল ও শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আমরা সব সময় বিদেশিদের আহ্বান জানাই আমাদের দেশে আসার জন্য। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সঙ্গে আমাদের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা রয়েছে। এর আওতায় আমরা যেসব বিদেশি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা সরকারের কাছে বারবার আহ্বান করছি যাতে বিদেশিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়াটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস করা হয়। না হলে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।