২০২০ সালে অলিম্পিকের আয়োজক দেশ হয়েছে জাপান। আর এই উপলক্ষে দেশটিতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পূর্ণোদ্যমে প্রস্তুতি। অলিম্পিক মাঠ থেকে শুরু করে রাস্তার বিলবোর্ড ও ট্রাফিক সিগনালে আনা হয়েছে বেশ পরির্তন। ১৯৬৪ সালেও আয়োজক ছিল স্বাগতিক জাপান। এই ৫৩ বছরে রাজধানী টোকিওতে কী পরিবর্তন হয়েছে!
এশিয়ার মধ্যে প্রথমবারের মতো অলিম্পিক গেইমস-এর আয়োজক দেশ হিসেবে জাপানকে ঘোষণা করা হয়। আর ওই সময় পুরো খেলা হয়েছিল রাজধানী টোকিওর জাতীয় স্টেডিয়ামে।
তখন টোকিওর বাসিন্দা এক কোটি ছিলো। আর এই তিপ্পান্নো বছরে বেড়েছে মাত্র ত্রিশ লাখ। মানুষ বাড়লেও পথ-ঘাটে তেমন পরিবর্তন আসেনি। ১৯৬৪ সালের রাস্তাগুলো এখনও ঠিক সেরকমই প্রশ্স্ত আছে। রাস্তার দুই পাশে কেবল উঠেছে সুউচ্চ ভবন।
২০২০ সালের অলিম্পিককে সামনে রেখে প্রায় আড়াইশো বিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা) খরচ করে জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশেইতৈরি হচ্ছে নতুন স্টেডিয়াম।
প্রায় আশি হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামের স্থপতি কেনগো কুমা। ২০১৯ সালের নভেম্বরের মধ্যে এই স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
যে স্থানে বর্তমান স্টেডিয়াম করা হচ্ছে তার অদূরেই ১৯৬৪ সালে জাতীয় স্টেডিয়াম খেলা হয়েছিল। ওই খেলার শুরু ৪ বছর আগে ১৯৫৮ সালে ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের আদলে করা হয়েছিল ‘টোকিও টাওয়ার’।
টোকিও অলিম্পিক গেইমেস-এর এই স্টেডিয়ামের চারপাশে ৬৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। স্টেডিয়ামের তত্ত্বাবধায়করা বলছে, আরো এক লাখ ৩৪ হাজার গাছের চারা বপন করা হবে।
১৯৬৪ সালের অলিম্পিককে লক্ষ্য করে জাপান রেলওয়ে কোম্পানি সর্বপ্রথম সিনকানসেন ট্রেন জাপানে উদ্বোধন করে। ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার যেতে সক্ষম এই বুলেট ট্রেনটি চালুর সময় মাত্র ৫২৪ কিমি পথ ছিল।
বর্তমানে ২ হাজার ৭৬৪ কিমি বিস্তৃত পথে সিনকানসেন (রেলপথ) পুরো জাপানে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২০ সালে অলিম্পিকেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চমক দেবে।
টোকিওর ব্যস্ততম রাস্তা হলো ফুজিয়া কনফেকশনারি কোম্পানির সামনে জেব্রাক্রসিংটি। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই পথে চলাফেরা করে। স্থানীয়রা গিনজা সুকিয়াবাসী নামে এই স্থানকে চেনে। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক গেইমে এই ফুজিয়া কনফেকশনারি সামনে যে বিলবোর্ড(কার্টুন) দেখা যাচ্ছে তা রঙ্গিন টেলিভিশন বিক্রির। ৫৩ বছর পর এই স্থানে শোভা পাচ্ছে ফুজিয়ারলোগো। সেই সময় রাস্তায় বড় বড় ট্রাম দেখা গেলেও, ২০১৭ সালে দেখা যাচ্ছে প্রাইভেট কার। দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে তিপ্পান্নো বছর আগে টোকিওতে ১২ লাখ গাড়ি ছিল, যার সংখ্যা বর্তমানে ৬ কোটি।
টোকিও আশুকুসা সেনসুজি মন্দিরের পাশে রয়েছে নাকামিশে স্ট্রিট। ব্যস্ততম এই রাস্তা ১৯৬৪ সালেবিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের খোরাক ছিলো। রাস্তার দুই পাশে জাপানি পতাকার সাথে অলিম্পিকের লোগো দেখা যায়। ঠিক ২০১৭ সালে এসেও এই আকর্ষণ দেখা যায় পর্যটকদের। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় প্রতিদিনের দৃশ্য এটি।
জাপানের দ্রতগামী সিনকানসেন থাকলেও দেশটির বড় বড় কয়েকটি শহরে মনোরেল বা উড়ন্ত ট্রেন চালু রয়েছে। সিনকানসেন যে বছর চালু হয়েছিল সেই ১৯৬৪ সালে টোকিও হানেদা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শহরে মানুষজনের যাতায়াতের জন্য চালু হয়েছিল মনোরেলটি। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে জাপান সরকারের এই মনোরেল তেপান্ন বছর পরও একই আকর্ষণ রয়েছে।
মনোরেল রাস্তা যে রকম ছিল এখনো তা আগের মতোই রয়েছে। কেবল মনোরেল রাস্তার দুই পাশে উঠেছে সুউচ্চ ভবন। সাদা-কালো যুগের রঙ্গিন পরিবর্তন কেবল এটি।
লিখেছেন: এস এম নাদিম মাহমুদ, সৌজন্যে: বিডিনিউজ