‘আমি আমার অন্তিম ইচ্ছার কথা লিখছি, এগুলোই আমার জীবনের শেষ কথা। আমি আল-আকসার জন্য শহীদ হতে যাচ্ছি’। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এমন এক মর্মস্পর্শী পোস্ট দিয়ে ইসরাইলি সেটলারদের ওপর ছুরি হামলা চালিয়েছেন ওমর আল আবেদ নামের ১৯ বছরের এক ফিলিস্তিনি তরুণ।
শুক্রবার ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ৯০ মিনিটের মাথায় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের হালামিসহে ছুরি হামলা চালান ওই তরুণ। এতে তিন ইসরাইলি নিহত হ্য়। এদিকে হামলার পরপরই ওমরকে ধরে ফেলে ইসরাইলি সেনারা। এরপর তাকে গুলিও করা হয়।
শনিবার সকালে ইসরাইলি সৈন্যরা পশ্চিম তীরের কোবর গ্রামে ওমরের পরিবারের খোঁজে অভিযান চালায় এবং তার এক ভাইকে আটক করে। তবে হামলার ঘটনায় ওমর ও তার পরিবার বিপদে পড়লেও ফিলিস্তিনিদের কাছে রীতিমত নায়কে পরিণত হয়েছেন দুঃসাহসী তরুণটি। ফেসবুকে দেয়া পোস্ট নিয়ে তুমুল আলোচনাও শুরু হয়েছে।
আরবী ভাষায় লেখা ওমরের পোস্টটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেজ। এতে দেখা যায় ওমর লিখেছেন, ‘আমি বয়সে তরুণ, এখনও আমার বয়স কুড়ি বছর হয়নি, আমার অনেক স্বপ্ন ও সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ কেমন জীবন, যখন তারা (ইসরাইলিরা) কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আমাদের নারী ও তরুণদের হত্যা করছে? তারা আল-আকসা মসজিদকে অপবিত্র করছে আর আমরা ঘুমিয়ে থাকছি, এটি খুবই লজ্জার ব্যাপার যে আমরা অলস বসে আছি’।
যেসব ফিলিস্তিনির কাছে অস্ত্র আছে তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে তরুণটি লেখেন, আপনারা এসব অস্ত্র শুধু বিয়ের অনুষ্ঠান আর উৎসবের সময় বের করেন, আপনারা কি নিজের জন্য লজ্জিত বোধ করেন না? কেন আপনারা আল্লাহর নামের যুদ্ধের ঘোষণা দেন না। তারা আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে আর আপনাদের অস্ত্রের কোনো নড়াচড়া নাই।
এরপর ওমর লেখেন, আমার কাছে একটি চকচকে ধারালো ছুরি আছে, এটি আল-আকসার ডাকে সাড়া দিচ্ছে। তোমাদের (ইসরাইলি) জন্য লজ্জা, তোমাদের জন্য লজ্জা যারা ঘৃণা ছড়াও। আল্লাহ তোমাদের ওপর প্রতিশোধ নেবেন… আমরা সবাই ফিলিস্তিনের সন্তান এবং আমরা সবাই আল-আকসার সন্তান। আর তোমরা (ইসরাইলিরা) বানর এবং শুয়োরের সন্তানরা জেনে রাখ, তোমরা যদি আল-আকসার দরজা খুলে না দাও, আল্লাহ তোমাদের ধাওয়া করবেন এবং মর্মন্তুদ শাস্তি দেবেন, আমি তোমাদের হুঁশিয়ার করছি।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংস্থা হামাস ওমর আল আবেদের হামলাকে সমর্থন করেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র হুসাম বাদরান বলেন, ‘আল-আকসা মসজিদের সমর্থনে আমরা দখলদারির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালিয়ে যাব।
ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, হামলাকারী ওমরকে তারা হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে মনে করছে। তবে এখনও তাকে হামাসের সক্রিয় সদস্য বলে বিবেচনা করেনি তারা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার আল-আকসা মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ করেছে। এ সময় ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এত তিন ফিলিস্তিনি তরুণ নিহত এবং তিন শতাধিক আহত হন। এছাড়া আটক হন অন্তত ২৭ জন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, এদিন তিন হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বিক্ষোভে অংশ নেয়। এছাড়া গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলেও উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয়।