অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে মুসলিমদের মন জোগাতে দক্ষিণ কোরিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে হালাল খাদ্য উৎসব করার। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পাক কুন হে’র সর্বাত্মক ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক মুক্ত বাণিজ্য বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপের প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অথচ প্রচলিত অভিমত হলো, দক্ষিণ কোরিয়ার মুসলমানরা যে সব সমস্যার মোকাবিলা করছেন তার অন্যতম হচ্ছে- মসজিদের দুষ্প্রাপ্যতা ও হালাল রেস্তোরাঁর অভাব। কিন্তু দিন বদলেছে। নাগরিক সুবিধা ও উন্নত জীবনধারার জন্য সর্বজনবিদিত সুখ্যাতিপ্রাপ্ত কোরিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ বৌদ্ধ ও ২০ শতাংশ খ্রিস্টান। প্রায় ২৫.৩ শতাংশ কোরীয় নাগরিক নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম পালন করেন না। দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। সেই সঙ্গে দেঢ় লাখ বিদেশি মুসলিম কর্মজীবী রয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমানে ১৫টি মসজিদ, ৫টি ইসলামিক সেন্টার ও ১০০টি নামাজের স্থান রয়েছে। ১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ যেটা হেনাম-ডং সিউলে অবস্থিত।
এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে। কয়েকটি মুসলিম দেশের অর্থায়নে মসজিদটি নির্মিত হয়। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯৭৬ সালের ২১ মে। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
কোরিয়ায় নারীদের হিজাব পরিধানের জন্য তেমন কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। অযাচিতভাবে মুসলমানদের হেনস্থার শিকারও হতে হয় না। তবে দক্ষিণ কোরিয়া মনেপ্রাণে চাইছে দেশটিতে আরও বেশি পরিমাণে মুসলিম পর্যটক ও ছাত্ররা আসুক। এ লক্ষে কোরিয়ার রাষ্ট্রয়ত্ত্ব খাদ্য সংস্থা সম্প্রতি একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে।
এই অ্যাপের মাধ্যমে মুসলমানরা কোরিয়ার কোন কোন রেস্তোরাঁয় হালাল খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে তা জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে হালাল পণ্য পাওয়া যায় এমন বিপণীবিতানও সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন।
অ্যাপটির মাধ্যমে মুসলিম ক্রেতারা কোনো পণ্যের বারকোড স্ক্যান করে সেটি ‘হালাল’ সনদপ্রাপ্ত কিনা তাও জানতে পারবেন। জানা যাবে, মুসলিম পর্যটকদের পছন্দের জায়গা কোনগুলো, কোথায় রয়েছে নামাজের ব্যবস্থা। কম্পাসের সাহায্যে কেবলা নির্ণয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি শেষ হওয়া মালয়েশিয়ায় হালাল মেলায় অংশ নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। মেলাটি বিশ্বের ২৯টি দেশের ৫২৮টি কোম্পানির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলায় মোট স্টল ছিল ৬৪০টি।
এবার দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটন সংস্থা ঘোষণা করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে দুই মাসব্যাপী হালাল খাদ্য উৎসব করার। দেশটির পর্যটন সংস্থা বলছে, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ১১৭টি রেস্টুরেন্ট ‘মুসলিম বন্ধুদের রেঁস্তোরা’র অনুমোদন পেয়েছে। বর্তমানে কোরিয়ায় হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ২৫২টি। এসব রেস্টুরেন্টের ১১৭টি রাজধানী সিউলের বাইরে অবস্থিত।
দক্ষিণ কোরিয়া পর্যটন সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশটিতে বিদেশি মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটক বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে রেখে পর্যটন সংস্থা এমন ঘোষণা দিয়েছে। বাংলানিউজ